‘সুচিত্রা’ প্রজাতির প্রজাপতির পরিযান

‘সুচিত্রা’ প্রজাতির প্রজাপতির পরিযান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রতি বছর সুন্দরী ‘সুচিত্রা’ (পেইন্টেড লেডি) প্রজাতির প্রজাপতিরা প্রজননের অনুকূল অবস্থার সন্ধানে মহাদেশগুলির মধ্যে হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে। অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে এই পরিযানের প্রক্রিয়াটি তাদের জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় না, হয় পরিপার্শ্ব অনুযায়ী নিজেদের আচরণ বদলে নেওয়ার সামর্থ্য (ফেনোটাইপিক প্লাস্টিসিটি) দ্বারা। এ আবিষ্কার প্রজাপতির দেশান্তরী পরিযান সম্পর্কে পূর্ববর্তী ধারণাগুলিকে খন্ডন করেছে। ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিবর্তনী জীববিজ্ঞানী দারিয়া শিল্পিনা এ কথা জানিয়েছেন। এই প্রজাতির প্রজাপতিরা বসন্তকালে উত্তর আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে উড়ে যায়। সেখান থেকে তাদের বাচ্চারা উত্তরমুখে সুদূর সুইডেন এবং সুমেরুর তুন্দ্রা অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বিজ্ঞানীরা আগে মনে করতেন যে উত্তর ইউরোপে শীতকালে এরা মারা যায়। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, তারা আসলে যাত্রার একটা চক্র সম্পূর্ণ করে – শরৎকালে ফিরে আসে দক্ষিণে। একদল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে থেকে যায়, আবার অনেকে আফ্রিকা ফিরে যায়, এমনকি সাহারা মরুভূমি পেরিয়ে। শিল্পিনা ও তাঁর গবেষক দল বেনিন, সেনেগাল, মরক্কো, স্পেন, পর্তুগাল এবং মাল্টা প্রমুখ বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করেন। তাদের যাত্রাপথ অনুসরণের জন্য এক উন্নত ভূ-অবস্থান প্রকৌশল ব্যবহার করেন। প্রজাপতিদের পাখা থেকে সুস্থায়ী আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে তাঁরা নির্ণয় করেন, প্রতিটি প্রজাপতি ঠিক কোন জায়গায় কী খেয়ে শুঁয়োপোকা দশা থেকে প্রজাপতি হয়ে উঠেছিল। সহ-গবেষক মেগান রেইচ এবং ক্লেমেন্ত বাতাই (ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়) এই প্রকৌশলকে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদ্‌মের সঙ্গে অন্বিত করে আরও নিখুঁত করে তোলেন। তাঁরা দেখান, ওই প্রজাতির প্রজাপতিদের পরিযানের দুটো স্বতন্ত্র ধারা আছে। একদল উত্তরে স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল থেকে দক্ষিণ মুখে মস্ত দূরত্ব অতিক্রম করে সাহারা পেরিয়ে যায়। আরেক দল কাছাকাছির মধ্যে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলেই থিতু হয়। কিন্তু তাঁরা প্রজাপতিদের সমগ্র জিনোম পরম্পরা বিশ্লেষণ করে দেখেন, দূরগামী আর কাছাকাছি-থাকা প্রজাপতিগুলির মধ্যে বিশেষ কোনো জিনগত পার্থক্য নেই। তাঁদের মতে এর মূলে আছে পরিপার্শ্বর সংকেত অনুযায়ী আচরণ পরিবর্তন করার ক্ষমতা। সুইডেন থেকে একটি প্রজাপতি সাহারার মতো অনেক দূরে চলে যাওয়ার জন্য পরিবেশ থেকে জোরালো সংকেত পায়, যেমন দিন ছোটো হয়ে আসা, তাপমাত্রা কমা। এদিকে দক্ষিণ ফ্রান্সের অপেক্ষাকৃত মৃদু আবহাওয়ায় একটি প্রজাপতি ওইরকম কোনো সংকেত না পেয়ে কাছাকাছি ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে পরিভ্রমণ করবে। অতঃপর প্রশ্ন: সারা বিশ্বের সব ‘সুচিত্রা’ প্রজাতির প্রজাপতিরই পরিযানের ধরণ কি এই একই? সব প্রজাপতিই কি জিনের বদলে পরিবেশ থেকে সংকেত অনুসরণ করে পরিভ্রমণ করে? ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তন হলে সুচিত্রা প্রজাতির পরিযানের ধরণ কি বদলাবে? এসব নিয়ে গবেষণা চলছে। এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে পি এন এ এস নেক্সাস পত্রে।
সূত্রঃ http://earth.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =