সুমেরু অঞ্চলে গাছ লাগানো বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে, জানাচ্ছে গবেষণা

সুমেরু অঞ্চলে গাছ লাগানো বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে, জানাচ্ছে গবেষণা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ নভেম্বর, ২০২৪

বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে বাঁচার আশায়, সবুজ হারানো রোধ করতে আজ আমরা সবাই গাছ লাগাতে বদ্ধ পরিকর। গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন সঞ্চয় করে তাই বৃক্ষ রোপণকে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করার একটি সাশ্রয়ী উপায় হিসাবে ব্যাপকভাবে দাবিও করা হয়। কিন্তু, নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে লেখা এক অধ্যয়নে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন পৃথিবীর উচ্চ অক্ষাংশে বৃক্ষ রোপণ বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসের পরিবর্তে ত্বরান্বিত করবে। জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকায়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব প্রশমিত করার উপায় হিসাবে সরকার এবং কর্পোরেশনগুলো সুমেরু অঞ্চলে বড়ো ধরনের বৃক্ষ রোপণ প্রকল্প চালু করে। তবে গাছ যখন ভুল জায়গায় রোপণ করা হয় – যেমন বৃক্ষহীন তুন্দ্রাঅঞ্চলে বা জলাভূমি অথবা বরফ আচ্ছাদিত এলাকার সরল বর্গীয় অরণ্যে তখন তা বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। ডেনমার্কের আরহাস ইউনিভার্সিটির গবেষক জেপ্পে ক্রিস্টেনসেনের মতে, আর্কটিক এবং ঠিক তার নীচের সাব-আর্কটিক অঞ্চল তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে জলবায়ু প্রশমনের উদ্দেশ্যে গাছ পোঁতার জন্য উপযুক্ত নয়। সুমেরু অঞ্চলের মাটি পৃথিবীর সমস্ত গাছপালা থেকে বেশি কার্বন সঞ্চয় করে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মের শুরুতে যখন এই অঞ্চলে মাটি তুষারাবৃত থাকে তখন এই সাদা তুষার অনেক বেশি পরিমাণে সূর্যালোক মহাকাশে প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে সুমেরু অঞ্চলে সবুজ বা বাদামী গাছ থাকলে তা তুলনামূলকভাবে বেশি সূর্যরশ্মি শোষণ করবে। এই মাটি বনায়ন বা কৃষির জন্য চাষাবাদ, মাটিতে গাছের শিকড়ের অনুপ্রবেশের মতো ঝামেলা সইতে পারে না। এছাড়াও, উত্তর মেরুকে ঘিরে থাকা অঞ্চল- উত্তর আমেরিকা, এশিয়া এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা যেমন দাবানল এবং খরা প্রকট সেই কারণে সেখানে গাছপালা ধ্বংস হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন এবং আরও গুরুতর করে তোলে। তাই গবেষকরা বলছেন যে উচ্চ অক্ষাংশে বৃক্ষ রোপণ জলবায়ু সমস্যা সমাধানের একটি প্রধান উপায় হলেও এর বিপরীত প্রভাব রয়েছে। গবেষকদের মতে জলবায়ু বিতর্কটি খুব কার্বন-কেন্দ্রিক, কারণ বিগত শতকে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হল জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়েছে তার মাধ্যমে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করা সৌরশক্তির পরিমাণ যা পৃথিবীতে রয়ে যায় এবং সেই সৌরশক্তি যা আবার ফিরে যায় — পৃথিবীর তথাকথিত শক্তির ভারসাম্য। গ্রিনহাউস গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তবে উচ্চ অক্ষাংশে, কতটা সূর্যালোক তাপে রূপান্তরিত না হয়ে মহাকাশে প্রতিফলিত হয় তা মোট শক্তির ভারসাম্যের জন্য কার্বন সঞ্চয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই গবেষকদের মতে সুমেরু অঞ্চলে গাছ লাগিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার চেষ্টা আপাতত স্থগিত রাখাই ভালো। অন্য উপায়ের খোঁজ করা আরও বেশি জরুরি।