সূর্যমুখী ফুলের সূর্য অনুসরণ

সূর্যমুখী ফুলের সূর্য অনুসরণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ নভেম্বর, ২০২৩

সূর্য যখন পুব আকাশ থেকে পশ্চিম আকাশে অস্ত যায় সূর্যমুখী ফুলও সূর্যের সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে তাকে অনুসরণ করে। কিন্তু সূর্যমুখী ফুল কীভাবে সূর্যকে দেখে এবং তাকে অনুসরণ করে? ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানীর দল PLOS বায়োলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে বলেন যে ফুলগুলো এক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে।
বেশিরভাগ গাছপালা ফটোট্রপিজম বা আলোকবর্তিচলন দেখায় অর্থাৎ আলোর উৎসের দিকে তারা বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছিলেন যে সূর্যমুখীর হেলিওট্রপিজম বা সূর্যকে অনুসরণ করার ক্ষমতা ফোটোট্রপিন নামক অণু দ্বারা পরিচালিত হয় এবং একই মৌলিক প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট ফলত বর্ণালীর নীল প্রান্তের আলোকে সাড়া দেয়। সূর্যমুখীর কান্ডের পূর্ব দিকে একটু বেশি বৃদ্ধি করে মাথা দোলায় ও দিনের বেলায় মাথাটা ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে ঠেলে দেয় এবং রাতে পশ্চিম দিকের কাণ্ড একটু বেশি বৃদ্ধি পায় আর তাই মাথাটি পূর্ব দিকে ফিরে যায়। ইউসি ডেভিস কলেজ অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক হার্মার তার পরীক্ষাগারে পূর্বে দেখিয়েছে কীভাবে সূর্যমুখী ফুল সূর্যোদয়ের পূর্বাভাস দিতে তাদের অভ্যন্তরীণ সার্কাডিয়ান ঘড়ি ব্যবহার করে এবং সকালে পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতির সাথে ফুলের পাপড়ি মেলে ধরে। নতুন এই গবেষণায়, ক্রিস্টোফার ব্রুকস এবং হার্মার পরীক্ষাগারের গ্রোথ চেম্বারে জন্মানো সূর্যমুখী এবং বাইরে সূর্যালোকে বেড়ে ওঠা সূর্যমুখী কোন জিনের দ্বারা পরিচালিত তা দেখার চেষ্টা করেছে। পরীক্ষাগারে বেড়ে ওঠা সূর্যমুখী সরাসরি আলোর দিকে বেড়ে ওঠে ও তা ফটোট্রপিনের সাথে যুক্ত জিন সক্রিয় করে। কিন্তু বাইরে যে সূর্যমুখী ফুল সূর্যের সাথে তাদের মাথা দোলায় তাদের ক্ষেত্রে জিনের প্রকাশ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্যাটার্ন দেখায় যদিও ফটোট্রপিনের মধ্যে কোনও আপাত পার্থক্য ছিল না। গবেষকরা দেখেন যে একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সূর্যমুখীতে সম্ভবত একাধিক পথ রয়েছে এবং আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এরা সাড়া দেয়। সূর্যমুখী দ্রুত শিখতে পারে। হারমার দেখেন পরীক্ষাগারে বেড়ে ওঠা গাছপালা বাইরে সরানো হলে, তারা প্রথম দিন থেকেই সূর্যকে অনুসরণ করতে শুরু করে। এই আচরণটির সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভিদের ছায়াযুক্ত দিকে জিনের অভিব্যক্তি ঘটে যা আর পরবর্তী দিনগুলোতে পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায়নি। হার্মারের মতে আলো-সংবেদনশীলতা এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পূর্বে অজানা তথ্য প্রকাশ ছাড়াও, এই আবিষ্কারের ব্যাপক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তবে একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যে ঘটনা আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারি তা বাস্তব জগতে কাজ নাও করতে পারে।