সূর্যের রুদ্ররূপ

সূর্যের রুদ্ররূপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

প্রায় ৭৪ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের কোনো জিনিস কী আদৌ পর্যবেক্ষণ করা যায়? কিন্তু সে বস্তুটি যদি সূর্য হয় তাহলে? ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং নাসার সোলার অরবিটার যখন এই নতুন ছবিগুলো তুলেছিল তখন সূর্য থেকে তার দূরত্ব ছিল ৭৪ মিলিয়ন কিলোমিটার। আসলে সূর্যকে কাছ থেকে দেখতে কেমন লাগে- এই প্রশ্ন অনেকের মনেই রয়েছে। বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানমহলে এই নিয়ে কাজ চলেছে। ২০২০ সালে এই সৌর অরবিটার চালু হয়েছিল সূর্যের উপর নজরদারি করার জন্য। সূর্যের সৌর বায়ুর সৃষ্টির কারণ, চৌম্বক ক্ষেত্রের জটিল গতিশীলতা, সোলার ফ্লেয়ার এবং করোনাল মাস ইজেকশনের ঘটনাগুলো অধ্যয়ন করতে।
আসলে সূর্যের তেজ কমা-বাড়া নির্ভর করে তার সৌরচক্রের বা সোলার সাইকেলের উপর, যা সাধারণত, ১১ বছরের হয়। এই সৌরচক্রে ফোটোস্ফিয়ারে তৈরি হয় একের পর এক সৌরকলঙ্ক বা ‘সানস্পট’। সৌরকলঙ্কের সংখ্যা যত বাড়ে ততই শক্তি বাড়ে সৌরচক্রের। ৩০০টি বা তারও বেশি সৌরকলঙ্ক তৈরি হলে সেই সৌরচক্রটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত শক্তিশালী। সংখ্যাটা ২০০ বা তার কম হলে সেই সৌরচক্রকে দুর্বল বলা হয়। আর সৌরকলঙ্কের সংখ্যা ২৫০ হলে সেই সৌরচক্রটি হয় মাঝারি শক্তির। এই সময় সূর্যে দেখা যায় সোলার উইণ্ড বা সৌর বায়ু, সৌরঝড় বা সোলার স্টর্ম, সোলার ফ্লেয়ার বা সৌর শিখা এবং করোনাল মাস ইজেকশান বা সূর্য থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মতো ভয়ঙ্কর কিছু ঘটনা। মিশনের উদ্দেশ্যগুলোর দীর্ঘ তালিকার অন্যতম উদ্দেশ্য হল সূর্যের পৃষ্ঠের উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি। সেই কারণে মহাকাশযানে বিভিন্ন ইমেজার থাকে যা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে। সূর্যের বিভিন্ন স্তরের ছবি তুলতে এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক উন্মোচন করতে সহায়তা করে এই মহাকাশযান। সম্প্রতি ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি সূর্যের চারটি নতুন ছবি প্রকাশ করেছে, সূর্যের বিভিন্ন রূপের ছবি- দৃশ্যমান আলো, চৌম্বকীয়, প্লাজমা এবং ইউভি বা অতিবেগুনী রশ্মি। এই ছবিগুলো পোলারিমেট্রিক এবং হেলিওসিজমিক ইমেজার এবং এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজার যন্ত্রের সাহায্যে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তোলা হয়েছিল। প্রতিটি চিত্র ২৫টি ছবির একটি সংমিশ্রণ, সমস্ত একই দিনে তোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এগুলো সূর্যের তোলা সর্বোচ্চ রেজোলিউশনের ছবি। সোলার অরবিটারের প্রকল্প বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল মুলারের মতে, সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রই হল আমাদের নক্ষত্রকে বোঝার চাবিকাঠি। সোলার অরবিটারের পোলারিমেট্রিক এবং হেলিওসিজমিক ইমেজার যন্ত্রটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কীভাবে প্লাজমা সূর্যের পৃষ্ঠে ঘুরছে। নীল অঞ্চলগুলো অরবিটারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, অন্যদিকে লাল অঞ্চলগুলো ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সৌর অরবিটারের এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজার যন্ত্রটি সূর্য পৃষ্ঠে, ফটোস্ফিয়ারের উপরে কী ঘটছে তা দেখতে সাহায্য করে। সোলার অরবিটারের ছবিগুলো এতই অসাধারণ যে ছবিগুলোর মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।