
বড়ো-ছোটো সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিশেষজ্ঞদের খুব চিন্তা। কোন কোন সেতুর অবস্থা কতটা খারাপ তার একটা সার্বিক সমীক্ষার ফল যদি হাতের সামনে থাকত, কোন সেতুর কোন অংশটা কমজোরি সেটা যদি জানা থাকত, তাহলে সেতু সারাইয়ের অগ্রাধিকার ঠিক করে নেওয়া যেত। সেই কাজটা করেছেন সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের প্রফেসর নেকাটি কাটবাস এবং তাঁর একদা-ছাত্র মারোয়ান ডেবিজ, যিনি এখন নাসার ব্রিজ প্রোগ্রাম ম্যানেজার। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে ছ লক্ষ সেতুর মধ্যে কোনটার কী দশা তা নির্ণয় করার এক অভিনব পথ বার করেছেন তাঁরা। নাসার সেতু সারাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর এই পদ্ধতি ভালো ফল দিয়েছে।
এ যেন অনেকটা রোগনির্ণয়ের জন্য এক্স-রে কিংবা এম আর আই-এর মতন। যান্ত্রিক চিত্ররূপকে অবলোহিত উপাত্তর (ডেটা) সাপেক্ষে তুলনা করে তাঁরা সেতুগুলির অবকাঠামো আর উপরিকাঠামোর বিভিন্ন অঙ্গর কী অবস্থা তা নির্ণয় করেন। অবলোহিত চিত্রগ্রহণের সমস্যাগুলিকে অতিক্রম করার জন্য হাই-ডেফিনিশন চিত্রগ্রহণের বন্দোবস্ত করেন ডেবিজ। অবলোহিত ক্যামেরার সাহায্যে তাপের হেরফের নির্ণয় করে তাঁরা কাঠামোটির তাপীয় প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেন। তা থেকে কাঠামোটির মধ্যে তাপক্ষয়, জলবাষ্প ঢোকা কিংবা অন্যান্য ত্রুটির খবর মেলে।
এমন নয় যে এটা একেবারে নতুন কাজ। নতুন কাজটা হল স্নায়ু-জালিকা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে উপাত্তগুলোর (ডেটা) অর্থোদ্ধার। এর আগে অভিজ্ঞ পরিদর্শকদের দ্বারা সংগৃহীত তথ্যগুলির সঙ্গে এই সমীক্ষার ফলাফলকে মিলিয়ে দেখে তাঁরা যে-বিশ্লেষণটা চালিয়েছেন, সেখানেই এই পদ্ধতির অভিনবত্ব। অবলোহিত চিত্ররূপগুলি থেকে অবান্তর, অপ্রয়োজনীয় তথ্যকে দূর করে নির্ভেজাল তথ্যগুলিকে কাজে লাগিয়ে এবার তাঁরা সেতু-শরীরের রোগনির্ণয় করেন। তারপর সেই জ্ঞানকে মিলিয়ে নেন সেতু পরিদর্শনের চালু প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ধারণা গঠনের একটি সুসাধ্য স্নায়ু-জালিকা এবং কিছু সিদ্ধান্ত-গ্রহণের অ্যালগরিদ্মের সাহায্যে তাঁরা অতঃপর বৃত্তটি সম্পূর্ণ করেন। তখন এগুলি হয়ে ওঠে পরিদর্শক কিংবা ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশিকা। তাঁদের আর আলাদা করে উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য বিশেষ সময় খরচ করতে হয় না।
প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির দুটি ভাগ। প্রথমে তাঁরা বুঝিয়ে বলেছেন কীকরে এই নতুন প্রযুক্তিটিকে ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয় ভাগে দেখিয়েছেন কী করে নিখুঁত সিদ্ধান্ত-গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা যায় এবং কীভাবে সেতুটিকে নিরাপদ রাখা যায়। কোন সেতুটির দিকে এখনই নজর দিতে হবে, কোনটির জন্য আরও পরীক্ষা প্রয়োজন। এই বহুস্তর পরিদর্শন প্রকৌশলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিক হল, এইসব ফলাফলকে সার্বিক জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে সমন্বিত করে নিয়ে অন্য নানা ধরণের কাঠামো নিয়েও কাজ করা যাবে। শুধু কংক্রিটের তৈরি সেতু কেন, নানা রকম অবকাঠামোর প্রতি, কংক্রিটের বা ইস্পাতের তৈরি বড়ো বড়ো ভবনের প্রতিও এ পদ্ধতি সমান প্রযোজ্য।
কাটবাস আর ডেবিজ দুজনেই এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ প্রয়োগ বিষয়ে খুব আশাবাদী।
সূত্র: University of Central Florida. “UCF’s ‘bridge doctor’ combines imaging, neural network to efficiently evaluate concrete bridges’ safety.” ScienceDaily. ScienceDaily, 16 May 2025.
http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/05/250516165137.htm>