সেন্ট্রিফিউজের ভিতরে উঁকি

সেন্ট্রিফিউজের ভিতরে উঁকি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

সম্প্রতি একটি ক্যামেরার সাহায্যে সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রের ব্ল্যাক বক্সের ভিতরে উঁকি মারা গেছে। সেই ভিডিওগুলো যেমন মন্ত্রমুগ্ধকর, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, সেই ভিডিও আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তরলের গতিবিদ্যা দেখতে সাহায্য করে যা আমরা আগে কখনও দেখিনি৷ এই সেন্ট্রিফিউজ ক্যামেরায় পদার্থবিদ্যা এবং জেনেটিক্সের অধ্যয়ন থেকে শুরু করে খাদ্য, বর্জ্য-জল শোধন এবং গবেষণা ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। মরিস মিকার্স নামে এক ব্যক্তি প্রথম এটি করে দেখেন। বৈজ্ঞানিক ফটোগ্রাফি করার আগে, মিকার্স ডাচ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট-এ ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন, যেখানে তিনি প্যারাসাইট নির্ণয়সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে, মিকার্স অসংখ্যবার একটি সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু মেশিনের ভিতরে কী ঘটছে তা তার কাছে রহস্যাবৃত ছিল এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি সর্বদা তা দেখতে চেয়েছিলেন। পরীক্ষাগারে কাজ করার দরুন তার কেবলমাত্র ‘প্রি-সেন্ট্রিফিউজ’ নমুনা এবং ‘পোস্ট-সেন্ট্রিফিউজ’ নমুনার চাক্ষুষ জ্ঞান ছিল। মিকার্স কয়েক মাস ধরে একটি মেশিনে ডিজিটাল ক্যামেরা লাগানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকে যেমন যন্ত্রটি এত দ্রুত ঘোরে যে পৃথিবী পৃষ্ঠের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির চেয়ে ২৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী শক্তি তৈরি করে – যা অবশ্যই শুধুমাত্র চিত্রায়িত নমুনাকেই প্রভাবিত করে না, বরং রেকর্ডিং সরঞ্জামের ওপরও প্রভাব ফেলে। সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রে তরল এমন গতিতে ঘোরে যে তীব্র সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স বা কেন্দ্রতিগ বল তৈরি করে। সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রের কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা স্তরগুলো মাঝখানের স্তরের তুলনায় অনেক বেশি কেন্দ্রতিগ বল অনুভব করে, কারণ এক ঘূর্ণনে তারা যে বৃত্তটি তৈরি করছে তা অনেক বড়ো। এর ফলে তরলের কণার ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এটি ভিন্নভিন্নভাবে কণাগুলোকে প্রভাবিত করে, যার ফলে উপাদানগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্তরে বিভক্ত হয়ে যায়, সবচেয়ে ঘন পদার্থটি বাইরের দিকে থাকে। এই প্রযুক্তিটি বিশেষ করে রক্তের নমুনাকে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, প্লেটলেট এবং প্লাজমাতে বিভক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কোশ থেকে ডিএনএ আলাদা করতেও ব্যবহৃত হয়; যেহেতু ডিএনএ-এর ঘনত্ব অন্যান্য কোশের উপাদানের তুলনায় কম তাই এটি সেন্ট্রিফিউজের শীর্ষে উঠে যায়। বর্তমানে মিকার্স, নেদারল্যান্ডসের ডেলফ্ট ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির রিওলজিস্ট লরেঞ্জো বোট্টোর সাথে ‘স্লাজক্যাম’ নামে একটি প্রকল্পে সহযোগিতা করছেন, যা বর্জ্য কাদা জল থেকে মূল্যবান সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য প্রয়োগের অন্বেষণ করে। গবেষকরা এই প্রথম দেখতে পাচ্ছেন যে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ল্যাব-স্কেল সেন্ট্রিফিউজের ভিতরে কী ঘটছে, এবং বর্জ্য-জল শোধন ছাড়াও, জৈবপ্রযুক্তি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করার কথা ভাবছেন। এইজন্য আমাদের আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − three =