সেফট্রিয়াক্সোনের বিরুদ্ধে জীবাণুরা ‘ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিরোধী’ হয়ে উঠছে

সেফট্রিয়াক্সোনের বিরুদ্ধে জীবাণুরা ‘ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিরোধী’ হয়ে উঠছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জানুয়ারী, ২০২৪

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে লড়ে যুঝে নেওয়ার ক্ষমতা লাভ করে বেশ কিছু ব্যাকটিরিয়া। ফলে নির্দিষ্ট অসুখ প্রতিরোধে যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, একটা সময়ের পর তা আর কাজ করে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আনুমানিক ১.২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ঘটে। সময়মত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়নে বেড়ে যেতে পারে। এমন সমীক্ষার ফল দুশ্চিন্তায় রেখেছে চিকিৎসকদের। এক নতুন সরকারী সমীক্ষা অনুসারে ভারতের হাসপাতালে সর্বাধিকভাবে যে ওষুধটি ডাক্তাররা অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে দিয়ে থাকেন তার মধ্যে সেফট্রিয়াক্সোন বেশ পরিচিত। ভারতের ১৫টি রাজ্যের ২০টি হাসপাতালে করা এই সমীক্ষা অনুযায়ী এই ওষুধের ব্যবহারের ফলে রোগীর শরীরে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি) দ্বারা প্রকাশিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭%-এ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জনস্বাস্থ্যের জন্য শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকির বিষয় হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।
কেরালার গবেষকরা গত বছরে বলেছিলেন যে সেফট্রিয়াক্সোন, যা গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, আর সেভাবে কাজ করছে না, তারা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সেফট্রিয়াক্সোন সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, মূত্রনালীর সংক্রমণ, হাড় ও জয়েন্টের নরম কলার সংক্রমণ এবং গনোরিয়া রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ওষুধটি কার্যকরী এবং নিরাপদ হওয়া ছাড়াও, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশ কম। অনেকক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হলেও এটি সেবনকারী বেশিরভাগ রোগীদের জন্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয় নয়। গবেষকরা আরও বলেন যে অজানা কারণের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের প্রাথমিক চিকিত্সার ক্ষেত্রে সেফট্রিয়াক্সোন বিবেচনা করা উচিত, যখন গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কারণে সংক্রমণ ঘটে। গত বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে, IQVIA-এর মতে, মোনোসেফ ছিল ভারতে শীর্ষ-বিক্রীত ওষুধের ব্র্যান্ড, এবং তারপরে ছিল গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের অগমেন্টিন, যার সক্রিয় উপাদান হিসাবে অ্যামোক্সিসিলিন এবং ক্লোভিনিক অ্যাসিড রয়েছে। নভেম্বর মাসে, অগমেন্টিন ওষুধের ব্যবহার মনোসেফকে ছাড়িয়ে যায় এবং দেশের শীর্ষ বিক্রিত ওষুধের ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া, কানের সংক্রমণ, ব্রঙ্কাইটিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং অস্ত্রোপচারের পরে অগমেন্টিন দেওয়া হয়ে থাকে। ওষুধের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটিকে ঘিরে উদ্বেগও বাড়ছে। কেরালার গবেষণায় অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে যে উত্পাদিত প্রায় সমস্ত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত শরীরে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, এবং এটি সেফালোস্পোরিনের ক্ষেত্রেও সত্য, বিশেষ করে সেফট্রিয়াক্সোন।