সৌরশক্তির সাহায্যে সমুদ্রের জলকে পানীয় জলে রূপান্তর

সৌরশক্তির সাহায্যে সমুদ্রের জলকে পানীয় জলে রূপান্তর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সৌরশক্তি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে প্রতিটি ব্যক্তির পানীয় এবং স্বাস্থ্যবিধির জন্য প্রতিদিন ২০ লিটার জলের চাহিদা প্রাথমিক। কিন্তু ২০২৪ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডেভেলপমেন্টের রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের ২২০ কোটি মানুষ মিষ্টি জল বা পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা সমুদ্রের জল থেকে পানীয় জল উৎপাদন করছে। এই বাষ্পীভবন পদ্ধতি মূলত সৌরশক্তির সাহায্যে করা হচ্ছে। উপকূলবর্তী বা দ্বীপে বসবাসকারী মানুষদের মিষ্টি জল পাওয়ার জন্য সমুদ্রের জল লবণমুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজনীয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে বিশ্বব্যাপী জলের ব্যবহার। পৃথিবী জুড়ে মিষ্টি জল উৎপাদনের জন্য নতুন কার্যকরী পদ্ধতির চাহিদা অবিলম্বে প্রয়োজন।
বর্তমান ডিস্যালিনেশন সিস্টেম, সমুদ্রের জল পাম্প করে যাতে ঝিল্লির মাধ্যমে জল থেকে লবণ আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শক্তি-নিবিড়, আর লবণ প্রায়শই যন্ত্রের পৃষ্ঠে জমা হয়, যা জলের প্রবাহকে বাধা দিয়ে যন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস করে। এর ফলে এই সিস্টেমগুলো ঘন ঘন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় আর এই ধরনের যন্ত্র একটানা কাজ করতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, ওয়াটারলু গবেষকরা প্রাকৃতিক জলচক্রের অনুকরণে একটা যন্ত্র তৈরি করেছেন। গাছপালা যেমন শিকড় থেকে পাতায় জল পরিবহন করে, তেমনভাবে এই যন্ত্র জলকে বিশুদ্ধ করতে পারে। এই প্রযুক্তিতে বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়েনা। এই সিস্টেমকে এমনভাবে বানানো হয়েছে যা জলকে বাষ্পীভূত করে, তাকে পৃষ্ঠে পরিবহন করে আর বাষ্পকে ঘনীভূত করে বদ্ধ চক্রে জলে পরিণত করে। গবেষকরা পরিবাহী পলিমার ও তাপে প্রতিক্রিয়া দেখায় এমন পরাগ রেণুর প্রলেপ লেপিত নিকেল ফোম ব্যবহার করে যন্ত্র তৈরি করেছেন। এই উপাদান সৌর বিকিরণ বর্ণালী জুড়ে সূর্যশক্তিকে তাপে রূপান্তর করে। সৌর-চালিত এই যন্ত্র সৌর শক্তির ৯৩% রূপান্তর করতে পারে, যা বর্তমান ডিস্যালিনেশন সিস্টেমের চেয়ে পাঁচগুণ ভালো। পলিমারের ওপর লবণজলের একটা পাতলা স্তর উত্তপ্ত হয়ে ওপরের দিকে পরিবাহিত হয়। যেমন জল প্রাকৃতিকভাবে গাছের কৈশিক মূলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। জল বাষ্পীভূত হওয়ার সাথে সাথে, অবশিষ্ট লবণ যন্ত্রের নীচের স্তরে চলে যায়। এটা কার্যকরীভাবে লবণ জমা প্রতিরোধ করে যন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। এটা প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ২০ লিটার বিশুদ্ধ জল তৈরি করতে পারে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন ব্যক্তির সারাদিনের জলের ন্যূনতম চাহিদা।