
অতি সম্প্রতি জানা গেছে, শিরদাঁড়ার কাছাকাছি অঞ্চলে ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরোন এই দুই স্ত্রী-হরমোন, রোগ-প্রতিরোধী কোষগুলিকে কাজে লাগিয়ে আফিম গোত্রের একটি পদার্থ তৈরি করে ব্যথা কমিয়ে দেয়। পদার্থটি ব্যথার সংকেতগুলিকে মস্তিষ্কে পৌঁছনোর আগেই থামিয়ে দেয়। এই আবিষ্কারের দরুন ক্রনিক ব্যথার চিকিৎসায় নতুন রাস্তা বেরোতে পারে। আরও বোঝা যেতে পারে, কেন কোনো কোনো বেদনানাশক ওষুধ (বিশেষ করে আধ-কপালের ওষুধ) ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দেহে ভালো কাজ করে এবং কেন রজোনিবৃত্তির পর নারীরা বেশি ব্যথায় ভোগেন। ইউ সি সান ফ্রান্সিস্কোয় চালিত এই গবেষণা থেকে টি-নিয়ন্ত্রক রোগ-প্রতিরোধী কোষের এক সম্পূর্ণ নতুন ভূমিকার কথা জানা গেছে। এতদিন এটুকু জানা ছিল যে এই কোষগুলি প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা রাখে। ডক্টরোত্তর গবেষক ইলোরা মিডাভাইন বলেছেন, কিন্তু ‘এই কোষগুলির উপর যে লিঙ্গ-নির্ভর হরমোনের প্রভাব আছে, এবং সে-প্রভাবের পিছনে রোগ-প্রতিরোধতন্ত্রের কোনো ভূমিকা নেই, এ ব্যাপারটা খুব অস্বাভাবিক’। সায়েন্স পত্রিকায় এই গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা এই টি-নিয়ন্ত্রক রোগ-প্রতিরোধী কোষগুলির সুরক্ষা-আচ্ছাদনীগুলির দিকে নজর দেন। এই আচ্ছাদনীগুলি স্তরে স্তরে ইঁদুরদের মস্তিষ্ক আর শিরদাঁড়াকে মুড়ে রাখে। এতদিন বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, অল্পকাল আগে আবিষ্কৃত মেনিঞ্জিস নামক এই কোষকলাগুলির কাজ হল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং আবর্জনা সাফ করা। চর্ম বিশেষজ্ঞ সাকিন কাশেম বলেছেন, ‘রোগ-প্রতিরোধতন্ত্র আসলে এই মেনিঞ্জিসগুলোকে কাজে লাগিয়ে দূরের সেইসব নিউরনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যারা ত্বকের উপর সরাসরি কোনো সংবেদন হলে তাকে শনাক্ত করে। এ জিনিসটা আমাদের আগে জানা ছিল না’। ত্বকের কাছাকাছি কোনো নিউরন যখনই এমন একটা কিছুর অস্তিত্ব টের পায় যা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে, অমনি সে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠিয়ে দেয়। গবেষক দল দেখলেন, শিরদাঁড়ার নীচের দিকটাকে ঘিরে-রাখা মেনিঞ্জিসগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ টি-নিয়ন্ত্রক রোগ-প্রতিরোধী কোষ থাকে। একটি অধিবিষ (টক্সিন) ঢুকিয়ে ওগুলিকে হঠিয়ে দেওয়া মাত্র দেখা গেল, ওই কোষগুলির অভাবে স্ত্রী ইঁদুররা বেশি ব্যথা-কাতর হয়ে উঠল, কিন্তু পুরুষ ইঁদুররা হল না। কাশেম বলেছেন, ‘ব্যাপারটা যতখানি মনোমুগ্ধকর ততখানিই প্রহেলিকা। গোড়ার দিকে এটা বিশ্বাস করতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছিল’।
আরও পরীক্ষানিরীক্ষার পর দেখা গেল, ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরোন হরমোনই ওই কোষগুলোকে ব্যথানাশক এনকেফালিন তৈরির প্ররোচনা জোগায়। কী করে জোগায় সেটা ভবিষ্যতে জানা যাবে। কিন্তু আপাতত এই লিঙ্গ-নির্ভর পথরেখা সম্বন্ধে যেটুকু জানা গেছে তা থেকেই স্ত্রী-পুরুষ বিচার করে ব্যথা-চিকিৎসায় নতুন পথের সন্ধান মিলবে। রজোনিবৃত্তির পর নারীশরীর আর ও দুটি হরমোন নিঃসরণ করে না বলে অনেক সময়েই নারীরা ক্রনিক ব্যথায় কষ্ট পান। এর প্রশমনের উপায় হয়তো এবার বেরোবে। গবেষকরা চেষ্টা করছেন, এমনভাবে এই এনকেফালিন পদার্থটি তৈরি করতে, যাতে তা স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করতে পারে।