স্থুলতা ও বিশ্ব : হাল আমলের গবেষণা

স্থুলতা ও বিশ্ব : হাল আমলের গবেষণা

অর্পন নস্কর
Posted on ১২ জুন, ২০২২

১৯৭৫ থেকে ২০১৬ এই ৪১ বছরে স্থুল মানুষের সংখ্যা গোটা বিশ্বে প্রায় ৩ গুন বেড়ে গেছে। স্থুলতা যে মানবজীবনের জন্যে বিভিন্ন ভাবে ঝুঁকি স্বরূপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষত হার্টের অসুখ ও ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়ায় স্থুলতা। এতদিন সাধারণ ভাবে স্থুলতার জন্যে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকাকেই দায়ী করা হতো। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে স্থুলতার জন্যে দায়ী অন্য কিছুও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজের গবেষক কেভিন হল স্থুলতার ভিন্ন কারণ নিয়ে দুটি নতুন গবেষণা করেছেন। তাঁর প্রথম গবেষণায় তিনি দেখান, কম কার্বহাইড্রেড গ্রহন কলে মেদ কমার হারও কমে যায়। অর্থাৎ খাবারে শর্করার পরিমান কম রেখে মেদ ঝরানোর প্রচলিত পদ্ধতিটি কাজের নয়। দ্বিতীয় আর একটি গবেষণায় তিনি দেখান আমরা অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার যখন খাই তখন খাবারের তুলনায় কয়েকশোগুন বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করি।
দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে আরো কয়েকটি কথা বলা দরকার। বিশেষত বিশ্বায়ন উত্তর পৃথিবীতে খাদ্যাভ্যাসে এসেছে বদল। উন্নত দেশ গুলিতে তো বটেই, এমনকি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ বেড়েছে। যে খাবারে চিনি, নুন, তেল বা সুগন্ধি ইত্যাদির পরিমাণ বেশি। এর ফলে মস্তিষ্ক অন্ত্র থেকে গৃহীত খাদ্যের পরিমাণের হিসেব গুলিয়ে ফেলছে। তাই আমরা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলছি। যেমন দ্বিতীয় গবেষণাটিতে জানা যাচ্ছে, ১৯৭০ এর থেকে হিসেব সময়ে একজন মার্কিন নাগরিকের বর্তমান গৃহীত দৈনিক শক্তি প্রায় ৬০০ কিলোক্যালোরি বেড়েছে। হঠাৎ করে ৫০ বছরে একটা জাতি কীভাবে এতটা পেটুক হয়ে উঠলো?
২০১৮ সালের পরীক্ষায় কেভিন দেখলেন আশ্চার্য তথ্য। ২০ জনের স্বচ্ছাসেবক দল। প্রতিজন দুটি ভাগে ভাগ হয়ে দুসপ্তাহ প্রক্রিয়াজাত ও পরের সপ্তাহ সাধারণ খাবার গ্রহণ করলো। গবেষকরা দেখলেন যে সপ্তাহে একজন প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছে সে বা তারা প্রায় ৫০০ কিলোক্যালোরি বেশি গ্রহণ করছে। আর যখন সাধারণ খাবার খাচ্ছে তখন ৫০০ কিলোক্যালোরি কম গ্রহণ করছে। এই অদ্ভুত ঘটনার কারণ ব্যখ্যা করেন ইয়েন ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট ডানা স্মল। ডালা স্মল জানান, খাবার যখন আমরা খাই তখন পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত ভ্যাগাস নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে জানায় সমস্ত ডেটা। কতটুকু খাবার এলো পেটে, কতটা শক্তি সঞ্চিত হলো সেসব ডেটা। এরই সাথে মস্তিষ্ক মুখে পাওয়া স্বাদ মিলিয়ে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কখন খাওয়া বন্ধ করা উচিত। কিন্তু অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের বেলায় বিপদ হয়। অতিপ্রক্রিয়া জাত খাবারের কম্বিনেশন বুঝে ওঠার সময় মানুষ এখনো পায়নি। অর্থাৎ মানুষের মাস্তিষ্ক পায় নি। এর কারণ মানুষ একটি জাতি হিসেবে বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে খাদ্যের একরকম কম্বিনেশন খেয়ে আসছে। মস্তিষ্ক সেই মতো রিড করতে শিখেছে। অর্থাৎ পেটুক হয়ে ওঠেনি কেউ। সমস্যা মস্তিষ্কের হিসেবেই।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে পড়ে ফাস্ট ফুড, চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্ক, পিৎজা, পেস্ট্রি ইত্যাদি। চিপসের মতো লবনাক্ত বা পেস্ট্রির মতো উচ্চ চর্বি ও উচ্চ মিষ্টি যুক্ত খাবার প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। গত শতাব্দি পর্যন্ত মানুষ খেতখামারে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর নির্ভর করতো। প্রায় সারা বিশ্বেই। শতাব্দি শেষের বিশ্বায়ন ও খাদ্যের শিল্প অভিমুখীতা প্রক্রিয়াজাত খাবার বাড়িয়েছে বহু হারে। এর ফলে হঠাৎ বদলে যাওয়া খদ্যাভ্যাস মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে শরীরের। অন্ত্রের সঙ্গে মস্তিষ্কের কাজে তাল কেটে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + six =