স্নায়ুরোগ প্রতিরোধে মাইটোকন্ড্রিয়ার ভূমিকা

স্নায়ুরোগ প্রতিরোধে মাইটোকন্ড্রিয়ার ভূমিকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ আগষ্ট, ২০২৫

আমাদের প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র গঠন মাইটোকন্ড্রিয়া হল শরীরের জ্বালানি সরবরাহকারী কেন্দ্র। এরা কোষকে বাঁচিয়ে রাখতে শক্তি তৈরি করে, আর সেই শক্তির উপরই নির্ভর করে মস্তিষ্কের জটিল কাজ। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে, মাইটোকন্ড্রিয়ার সমস্যা সরাসরি স্নায়বিক অবক্ষয়জনিত রোগের (যেমন আলঝাইমার) স্মৃতিভ্রংশ ও অন্যান্য জটিলতার সঙ্গে যুক্ত। ফ্রান্সের ইনসার্ম ও বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, কানাডার মঙ্কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায়, নতুন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। এর সাহায্যে তাঁরা পরীক্ষামূলক প্রাণীর মস্তিষ্কে মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মক্ষমতা সাময়িকভাবে বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। দেখা গেছে, এরফলে স্মৃতিশক্তির ঘাটতি অনেকটাই কমে যায়। মস্তিষ্ক শরীরের সবচেয়ে বেশি শক্তি খরচ করে। প্রতিটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) সংকেত পাঠাবার জন্য প্রচুর শক্তির ওপর নির্ভরশীল। যদি মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা কমে যায়, নিউরন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আলঝাইমারের মতো রোগে অনেক সময় নিউরনের মৃত্যুর আগে থেকেই মাইটোকন্ড্রিয়ার দুর্বলতা দেখা যায়। এতদিন বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। এবার গবেষকরা একটি কৃত্রিম গ্রাহী তৈরি করেছেন, নাম mitoDreadd-Gs। এটি মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরে নির্দিষ্ট জি-প্রোটিনকে সক্রিয় করে, ফলে শক্তি উৎপাদন বেড়ে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই উদ্দীপনা দিলে মস্তিষ্কের মাইটোকন্ড্রিয়া স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করে, আর স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়। গবেষণার অন্যতম পরিচালক জিওভানি মারসিকানো বলেন ,“আমরা প্রথমবার প্রমাণ করতে পেরেছি, মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটি শুধু স্নায়ুরোগের সঙ্গে যুক্ত নয়, বরং এটি রোগের শুরুতেই বড় ভূমিকা রাখতে পারে।” গবেষণাপত্রের সহ-লেখক এতিয়েন হেবার-শাতেলাঁ যোগ করেন, “এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে স্মৃতিভ্রংশের জৈবিক কারণ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এবং নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পথ খুলে দিতে পারে।” অন্য গবেষক লুইজি বেলোক্কিও জানান, “এখন আমাদের লক্ষ্য হলো দীর্ঘসময় ধরে মাইটোকন্ড্রিয়া সক্রিয় রাখলে রোগের অগ্রগতি থামানো যায় কিনা, অথবা নিউরনের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় কিনা, তা যাচাই করা।”গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, স্নায়বিক অবক্ষয়জনিত রোগের চিকিৎসায় মাইটোকন্ড্রিয়া হতে পারে নতুন দিশা। স্মৃতিভ্রংশর মতো জটিল সমস্যার মোকাবিলায় এটি এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সহজভাবে বললে, আমাদের মস্তিষ্ককে চালু রাখার জন্য যে ক্ষুদ্র শক্তিকেন্দ্রটি কাজ করে, সেই মাইটোকন্ড্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়লেই স্নায়ুরোগ শুরু হতে পারে। আর বিজ্ঞানীরা এখন সেই শক্তিকেন্দ্রকে আবার সচল করে রোগের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

সূত্র : “Potentiation of mitochondrial function by mitoDREADD-Gs reverses pharmacological and neurodegenerative cognitive impairment in mice” by Antonio C. Pagano Zottola, Rebeca Martín-Jiménez, Gianluca Lavanco, Geneviève Hamel-Côté, Carla Ramon-Duaso, Rui S. Rodrigues, Yamuna Mariani, Mehtab Khan, Filippo Drago, Stephanie Jean,et.al ; 11 August 2025, Nature Neuroscience.

DOI: 10.1038/s41593-025-02032-y

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =