স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেছেন ভুলে যাওয়া শিখনের একটা রূপ

স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেছেন ভুলে যাওয়া শিখনের একটা রূপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ আগষ্ট, ২০২৩

স্নায়ুবিজ্ঞানীরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, যে “ভুলে যাওয়া” সবসময় খারাপ নাও হতে পারে এবং এটা শিখনের একটা রূপ। এই নতুন তত্ত্বের পিছনে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আমাদের নির্দিষ্ট স্মৃতি মনে করার ক্ষমতা পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া এবং পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে। আর এই ভুলে যাওয়া মস্তিষ্কের একটি কার্যকরী বৈশিষ্ট্য হতে পারে, যা গতিশীল পরিবেশের সাথে মস্তিষ্ককে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করতে দেয়। একটা পরিবর্তিত বিশ্ব যেখানে অন্যান্য অনেক জীব ও আমরা বাস করি, সেখানে কিছু স্মৃতি ভুলে যাওয়া উপকারী। তারা যুক্তি দিয়েছেন, এটা নমনীয় আচরণ এবং ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কোনো স্মৃতি যদি এমন পরিস্থিতিতে অর্জিত হয় যা বর্তমান পরিবেশের সাথে বিশেষ প্রাসঙ্গিক নয়, তবে সেগুলো ভুলে যাওয়া একটি ইতিবাচক পরিবর্তন যা আমাদের ভালো রাখতে সাহায্য করে।
গবেষকরা সেল রিপোর্টস -এ তারা তাদের নতুন পরীক্ষামূলক গবেষণার প্রথম রিপোর্ট উপস্থাপন করেন যেখানে সাধারণ “প্রতিদিন” ভুলে যাওয়ার প্রভাব কীভাবে স্বাভাবিক ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলি মস্তিষ্কের বিশেষ স্মৃতিগুলিকে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছিল।
দলটি রেট্রোঅ্যাকটিভ ইন্টারফেয়ারেন্স নামক ‘ভুলে যাওয়া’র একটি ধরন অধ্যয়ন করেছে, যেখানে একই সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্প্রতি গঠিত স্মৃতিগুলিকে ভুলিয়ে দেয়। তাদের গবেষণায়, ইঁদুরদের নির্দিষ্ট কোনো বস্তুকে ঘরের সাপেক্ষে দেখানো হয়েছিল, এবং তারপরে সেই বস্তুকে স্থানচ্যুত করে দেখা হয়েছিল, ইঁদুররা তা চিনতে পারছে কিনা। দেখা গেছে ইঁদুররা এই সংযোগ তখন ভুলে যায় যখন তারা আরো অন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় যারা প্রথম স্মৃতিতে বাধা দেয়।
ভুলে যাওয়ার এই ধরন অধ্যয়ন করার জন্য, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা জেনেটিক্যালি এই ইঁদুরের মস্তিষ্কে একটি প্রাসঙ্গিক “এনগ্রাম” অর্থাৎ মস্তিষ্কের একগুচ্ছ কোশ যা একটি নির্দিষ্ট স্মৃতি সঞ্চয় করে; তাকে লেবেল করেন এবং এই কোশগুলোর সক্রিয়করণ এবং কার্যকারিতা অনুসরণ করেন। অপটোজেনেটিক্স নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে তারা দেখতে পান যে আলোর সাহায্যে এনগ্রাম কোশে উদ্দীপনা সঞ্চার করলে একাধিক আচরণগত পরিস্থিতিতে হারানো স্মৃতি পুনরুদ্ধার হয়। তার সাথে যখন ইঁদুরগুলো নতুন এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল যে অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলির সাথে সম্পর্কিত, তখন ‘হারানো’ এনগ্রামগুলি স্বাভাবিকভাবেই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
গবেষকরা বলেন তখনই আমরা ভুলে যাই যখন এনগ্রাম কোশগুলো পুনরায় সক্রিয় করা যায় না। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে স্মৃতিগুলো সেখানেই থাকে, তবে নির্দিষ্টকোশ সক্রিয় না হলে বিষয়টি স্মরণে আসে না। তারা তুলনা দেন যেন স্মৃতিগুলো সিন্দুকে নিরাপদে সংরক্ষণ করা আছে কিন্তু আমরা এই সিন্দুক খোলার কোডটি মনে করতে পারছিনা।
গবেষকরা জানিয়েছেন এনগ্রামের মধ্যে প্রতিযোগিতা স্মৃতিকে প্রভাবিত করে এবং ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে স্বাভাবিক এবং কৃত্রিম উভয়ভাবেই সংকেত দ্বারা পুনরায় সক্রিয় করা যায় এবং সেইসাথে নতুন তথ্যও যোগ করা যায়। পরিবেশগত ক্রমাগত পরিবর্তন একাধিক এনগ্রামের এনকোডিংয়ের দিকে নিয়ে যায় যারা তাদের একত্রীকরণ এবং প্রকাশের জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। কিন্তু স্মৃতিগুলিকে আশেপাশের সংকেত দ্বারা সক্রিয় করা যেতে পারে । তবে বোঝা যাচ্ছে “স্বাভাবিকভাবে ভুলে যাওয়া” পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। এই গবেষণা অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে, যেখানে এই প্রতিদিন ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলো নানাভাবে সক্রিয় করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + eleven =