স্বনিয়ন্ত্রিত রোবটের দুনিয়া

স্বনিয়ন্ত্রিত রোবটের দুনিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুলাই, ২০২৪
রোবটের-দুনিয়া

কখনও ভেবে দেখেছেন পোকামাকড়রা কীভাবে তাদের বাসা থেকে বহু দূর উড়ে যায়, আবার পথ খুঁজে বাসায় ফিরে আসে? শুধুমাত্র জীববিজ্ঞান নয়, এই প্রশ্নের উত্তর, কাজে লাগতে পারে রোবট তৈরিতে। নিজেই নিজেকে চালনা করতে পারা ছোটো ছোটো, স্বনিয়ন্ত্রাধীন রোবট। ড্রোন নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীরা তাই খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে পিঁপড়েরা তাদের বাসায় ফেরে। তারা দেখেন পিঁপড়ে প্রথমে সেই পরিবেশটা চেনার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় তাদের পা গুণে নিজের চেনা পরিবেশে ফিরে আসা। পিঁপড়ের এই ক্ষমতার দ্বারা উজ্জীবিত হয়েই গবেষকরা ক্ষুদ্র, হালকা রোবট তৈরি করেছেন যা নিজে নিজে পথ চিনে ফিরে আসবে। এই কৌশল ব্যবহার করেই রোবটগুলো দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বাড়ি ফিরে আসতে পারে। এর জন্য খুব কমই তাদের গণনা বা স্মৃতির উপর ভরসা করতে হয়। গবেষকরা আশা করেন ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র, নিজে নিজেই চালিত রোবটগুলো বিভিন্ন গুদামে স্টক খুঁজতে বা কারখানায় গ্যাস লিক শনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি সায়েন্স রোবোটিক্সে গবেষণাটি প্রকাশ হয়।
দশ থেকে কয়েকশো গ্রামের এই ক্ষুদ্র রোবট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। হালকা ওজনের ফলে দুর্ঘটনাবশত কারও সাথে ধাক্কা লাগলেও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আকারে ছোটো হওয়ায় তারা চলাচল করতে পারে সংকীর্ণ এলাকায় । গবেষকদের অনুমান যদি সস্তায় এই রোবট তৈরি করা যায়, তবে সেগুলো আরও বেশি সংখ্যায় ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব দ্রুত একটি বড়ো এলাকা তারা চষে ফেলতে পারবে। গ্রিনহাউসে সেই রোবট প্রাথমিকভাবে কীটপতঙ্গ বা রোগও শনাক্ত করতে পারবে।
তবে নিজেরাই নিজেদের চালাচ্ছে এমন ছোট্টো রোবট তৈরি করা বোধহয় কঠিন। কারণ বড়ো রোবটের তুলনায় তাদের শরীরে উপাদানও কম। নেভিগেট করতে সাধারণত রোবটরা বাইরের অবকাঠামোর সাহায্য নেয়। বাড়ির বাইরে তারা জিপিএস স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয় আর বাড়ির ভিতরে বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তবে সবসময় এই ব্যবস্থাগুলো কার্যকরী নাও হতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা সেই প্রকৃতির কাছেই দ্বারস্থ হয়েছে। পোকাদের অনুপ্রেরণায় তৈরি করা এই নেভিগেশন কৌশলটি ব্যবহার করে গবেষকরা একটি ৫৬-গ্রাম ওজনের ড্রোন তৈরি করেছেন, নাম- ক্রেজি ফাইল। তার মধ্যে চারদিকের ছবি তুলতে পারা একটি ক্যামেরা রয়েছে। সেটি শুধুমাত্র ০.৬৫ কিলোবাইট ব্যবহার করে ১০০ মিটার দূরত্ব কভার করতে পারে। সমস্ত চাক্ষুষ প্রক্রিয়াকরণ একটি “মাইক্রো-কন্ট্রোলার” নামের একটি ছোটো কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘটেছে। গবেষকরা আশাবাদী এই ড্রোন উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসবে নিজের ডেরায়। বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় কত কিছুই না সম্ভব!