সত্যিই সবদিক দিয়ে চকোলেট উপাদেয় খাবার – এই বক্তব্যে শিলমোহর পড়ল এবার। ফ্ল্যাভানলস নামক স্নায়ুসুরক্ষী যৌগের উপস্থিতি পাওয়া গেছে কোকোয়া বিনসে- ইতালির গবেষকরা হাজির করেছেন এমনই তথ্য। বেশ অদ্ভুতভাবেই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন- বিভিন্ন বৌদ্ধিক ক্ষেত্রের সাহিত্য সমাহার বিশ্লেষণ করে কোকোয়া ফ্ল্যাভানলসের সূক্ষ্ম এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রয়োগের খোঁজ পেয়েছেন। কোকোয়া খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে মস্তিষ্কে কী প্রভাব পড়ে অথবা দীর্ঘদিন একটানা খেলে কী হতে পারে- এই ছিল বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন।
কোকোয়া ফ্ল্যাভানলসের সূক্ষ্ম প্রভাব বিভিন্ন পরীক্ষার পরে খুবই ক্ষীণ বিক্ষিপ্ত প্রমাণিত হয়েছে। তবুও, বেশীরভাগ ফলাফলই বলছে কোকোয়া কিন্তু ধীশক্তি বৃদ্ধির জন্য উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের কার্যকরী স্মৃতি এবং দৃষ্টিগ্রাহ্য তথ্যকে মেপে দেখার ক্ষমতা বেড়েছে কোকোয়া খাওয়ার পর। মহিলাদের ক্ষেত্রে, রাত্রিব্যাপী না-ঘুমানোর পর যে অনিদ্রাজনিত শ্লথতা – কোকোয়া সেবনের ফলে তা দূর হয়েছে। দীর্ঘদিন যারা অনিদ্রায় ভুগছেন বা রাতের শিফটে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে আশাব্যাঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।
পরীক্ষার স্থায়িত্ব বা মানসিক চাপের উপর ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে যদিও। যেমন যুবাবয়সের ক্ষেত্রে বেশ কঠিন পরীক্ষার পরেই আশানরুপ প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
যাদের বয়স অপেক্ষাকৃত বেশী, তাদের উপরেই দীর্ঘকালীন কোকোয়া খাওয়ার প্রভাব খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। মনোযোগ, কাজের গতি, ক্রিয়াশীল স্মৃতি বা সাবলীল কথা বলার ক্ষমতা – এই সমস্তকিছুরই ক্রমোন্নতি ঘটে কোকোয়া ফ্ল্যাভানলসের গুণে।
স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করেছে বা চিন্তাশক্তির কিছুটা সমস্যা যাদের আছে, সেইসব বয়স্ক মানুষরাই কোকোয়ার গুণগান বেশী করেছেন।
ইতালির লা’অ্যাকুইলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভ্যালেন্টিনা সোচ্চি এবং মিশেল ফেরেরার মতে, এটাই সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত সুখের খবর। তাঁরা বলছেন, “ চেতনার শক্তি বৃদ্ধি করে এই ভঙ্গুর জনসংখ্যার ভিড়েও মানুষের বৌদ্ধিক পরিসর বাঁচিয়ে রেখেছে কোকোয়া। কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের জন্য তা উপকারী। আবার, মস্তিষ্কের হাইপোক্যাম্পাসের খাঁজকাটা জাইরাসে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে এই ফ্ল্যাভানলস।
যদিও, চকোলেট খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। ক্যাফিন বা থিওব্রোমিন এবং শর্করা ও দুধের উপস্থিতির জন্য চকোলেটের ক্যালোরিমূল্য বৃদ্ধি পায়, যা ক্ষতিকর।
তবে, তত্ত্বের ঘনঘটা সরিয়ে বিজ্ঞানী মুখে তুলে নিয়েছেন ফ্ল্যাভানলসে ভরপুর ডার্ক চকোলেট। তাঁরা প্রতিদিন কিছুটা করে চকোলেট খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন।