স্মার্ট কনট্যাক্ট লেন্স

স্মার্ট কনট্যাক্ট লেন্স

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুন, ২০২৫

কনট্যাক্ট লেন্স হল অক্ষি পৃষ্ঠে বসানো পাতলা লেন্স। বলা ভালো চোখের কৃত্রিম যন্ত্র যা সাধারণত দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি সংশোধনে চশমার বিকল্প।
চীনের ইউনিভার্সিটি অফ ইলেকট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা তৈরি করেছেন এক অত্যাধুনিক স্মার্ট কনট্যাক্ট লেন্স ,যেটি চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেও চোখের ভিতরের চাপ এবং অক্ষিগোলকের নড়াচড়া নিরীক্ষণ করতে পারে । এই লেন্সটি দৃষ্টি ঝাপসা না করেই স্মার্ট ফোনে তাৎক্ষণিক ও উচ্চ রেজোলিউশানের তথ্য প্রেরণ করে এবং এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একেবারে আরামদায়ক।

ইনট্রাঅকুলার প্রেশার (IOP) হল চোখের ভিতরকার তরলের চাপ, যা চোখের ভেতরের তরল উৎপাদন এবং নিষ্কাশনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি চোখের স্বাস্থ্য এবং দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চোখের পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এর পরিমাপ করা হয়। চোখের চাপ বেড়ে যাওয়া গ্লুকোমার একটি লক্ষণ হতে পারে— যা অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়। এই চাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতে বাড়তে পারে। প্রচলিত যন্ত্রপাতি চোখ বন্ধ থাকাকালীন অবস্থায় চাপ পরিমাপ করতে পারে না, কিন্তু স্মার্ট লেন্স সেই সমস্যার সমাধান এনে দিয়েছে।
লেন্সটিতে দু-ধরনের সেন্সর থাকে-১) ক্যাপাসিটিভ সেন্সর ও ২) ম্যাগনেটিক সেন্সর।
এই সেন্সরগুলো পাঁচটি পাতলা ফিল্মের মধ্যে যুক্ত থাকে। এতে থাকা তামার কুণ্ডলী চোখের চাপের সূক্ষ্ম পরিবর্তন শনাক্ত করে এবং ম্যাগনেটিক ব্যান্ড অক্ষিগোলকের গতিবিধি নিরীক্ষণ করে। প্রাপ্ত তথ্য কাচের ফ্রেমে থাকা রিসিভার ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্ট ফোন পাঠায়।
এই স্মার্ট লেন্সটি স্বচ্ছ ইলাস্টোমার দিয়ে তৈরী। এর ৫টি স্তর থাকলেও এটি সাধারণ কনট্যাক্ট লেন্সের চেয়েও পাতলা। এটিকে আমাদের চোখের জন্য এক আরামদায়ক নরম আস্তরণ বলা চলে। এ আমাদের চোখকে বাহ্যিক ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং এতে অক্সিজেন প্রবাহযোগ্য আবরণও রয়েছে। খরগোশ ও মানুষের ওপর পরীক্ষায় এটি নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে, চোখে কোনোপ্রকার জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি দেখা যায়নি।

একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী ও ডাক্তাররা চোখের চাপ এবং চোখের গতিবিধির তথ্য প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পারেন।
এটি রাতের বেলায় চোখের চাপের পরিবর্তন ও অক্ষিগোলোকের চলাচলের ধরন বিশ্লেষণ করে গ্লুকোমা বা অন্যান্য রোগের প্রাথমিক সতর্কতা দিতে পারে। এমনকিঘুমের মধ্যে দ্ম আটকে যাওয়া (স্লিপ অ্যাপনিয়া) , পারকিনসন্স ডিজিস এবং মানসিক অবস্থার সংকেতও দিতে সক্ষম।
গবেষকরা ভবিষ্যতে এটি মারফত ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থাও যুক্ত করতে চান, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওষুধ বেরিয়ে আসে। মডিউলার ডিজাইনে তৈরী হওয়ায় এটিকে বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে সুবিধা হবে। এর দাম সাধ্যের মধ্যে হলে এটি ঘরে ঘরে ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য হতে পারে।

এই প্রযুক্তি চোখের চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের উপর ২৪ ঘণ্টার সম্পুর্ণ চিত্র প্রদান করতে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × three =