হঠাৎ আলোর ঝলকানি

হঠাৎ আলোর ঝলকানি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ মে, ২০২৫

সারা দিন ধরে মাথা খুঁড়ে মরছেন একটা প্রশ্নের সমাধান করবার জন্য। তারপর হঠাৎ চান করতে গিয়ে নিমেষে সেটা ভেসে উঠল মনের মধ্যে! এটাকেই তো বলে ‘ইউরেকা’ মুহূর্ত। কাব্য করে বললে হঠাৎ আলোর ঝলকানি। তখন ঠিক কী হয় মস্তিষ্কের মধ্যে?
ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়, হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় আর হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একযোগে এ নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন। এঁরা ‘এফ এম আর আই’ যন্ত্র সহযোগে ঠিক ওই মুহূর্তে মস্তিষ্কে কী ঘটে তার চিত্ররূপ তুলেছেন। গত ৯ মে তারিখের ‘নেচার কমিউনিকেশন্‌স’ পত্রিকায় এই গবেষণায় বিবরণ বেরিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের সামনে এক প্রস্থ দুরঙা ছবি দেওয়া হল। ছবিগুলির বেশির ভাগটাই ফাঁকা। বাকি অংশগুলোর রেখাটুকু দেখে আন্দাজে সেই ফাঁক ভরাট করে একটা বাস্তব জিনিসকে শনাক্ত করাটাই হল পরীক্ষা। এই ধরণের ছোটো ছোটো আবিষ্কারই কিন্তু বড়ো বড়ো “ইউরেকা মুহূর্ত”কে ডেকে আনে। সমাধান বার করার সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহণকারীকে জিজ্ঞেস করা হয়, এটা কি আচমকা আপনার মাথায় ভেসে উঠল, নাকি অনেকক্ষণ ধরে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে ভাবনাচিন্তা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন? সমাধানটি যে ঠিক সে বিষয়ে আপনি কতটা নিশ্চিত?
দেখা গেল, নিমেষে মনের মধ্যে নিমেষে ঝলসে-ওঠা উত্তরগুলোই তাঁরা বেশি করে মনে করতে পারছেন। শুধু তাই নয়, যেসব সমাধান নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত, সেগুলো তাঁরা পাঁচ দিন পরেও মনে করতে পারছিলেন। কোনো কিছু শেখার সময় মনে এই হঠাৎ আলোর ঝলকানির অনুভূতি জাগলে সেটাকে মনে রাখার ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে আয়।
ওই মুহূর্তে মস্তিষ্কের কতকগুলো পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। কোনো একটা অন্তর্দৃষ্টির ঝলক জেগে উঠলেই মস্তিষ্কের কাজু বাদাম আকৃতির হিপোক্যাম্পাস নামক অংশটির মধ্যে হুলুস্থূল বেধে যায়। অন্তর্দৃষ্টিটা যত জোরালো, হুলুস্থূলটাও ততই বেশি। যে-মুহূর্তে কোনো অংশগ্রহণকারী লুকোনো বস্তুটাকে শনাক্ত করতে পারল এবং তার চিত্ররূপটাকে নতুন আলোকে দেখতে পারল, তখনই তার মস্তিষ্ককোষগুলোর সক্রিয়তার ছাঁদটা গেল পলটে – বিশেষ করে সেইসব অঞ্চলে যার কাজ হল দৃশ্য ছাঁদগুলোকে শনাক্ত করা। উচ্ছ্বাস যত বেশি, ওইসব অঞ্চলের পরিবর্তনও ততই বেশি। আরো দেখা গেল, খুব জোরালো “ইউরেকা মুহূর্তগুলো”র অভিজ্ঞতা জড়িয়ে থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে উন্নততর সংযোগশীলতার সঙ্গে। এইসব অঞ্চলগুলি তখন নিজেদের মধ্যে আরও সুনিপুণভাবে ভাব বিনিময় করে।
অন্তর্দৃষ্টিই হল সৃষ্টিশীলতার চাবিকাঠি। এই গবেষণায় মস্তিষ্ক কী করে সৃষ্টিশীল সমাধানে উপনীত হয় সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। ক্লাসঘরে অনুসন্ধান-ভিত্তিক শিক্ষাদান প্রণালীর সপক্ষেও সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে এ গবেষণা থেকে। শিক্ষার পরিপার্শ্বটি যদি অন্তর্দৃষ্টিকে উৎসাহিত করে তাহলে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি আর উপলব্ধি বাড়ে।
এই গবেষণায় কেবল হঠাৎ আলোর ঝলকানির ঠিক আগের ও ঠিক পরের মুহূর্তের মস্তিষ্কক্রিয়ার উপর নজর রাখা হয়েছে। এই দুই মুহূর্তের মাঝখানের কয়েক সেকেন্ডে মস্তিষ্কে কী ঘটে তা নিয়ে এবার গবেষণা চালাবার ইচ্ছে রয়েছে গবেষকদের।
আইনস্টাইন ফাউন্ডেশন, বার্লিন এবং সোনোফিলিয়া ফাউন্ডেশনের আর্থিক আনুকূল্যে এ গবেষণা চালানো হয়।

“Duke University. “Brain scans reveal what happens in the mind when insight strikes.” ScienceDaily. ScienceDaily, 14 May 2025. http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/05/250514175431.htm>.
https://www.sciencedaily.com/releases/2025/05/250514175431.htm#:~:text=Duke%20University.%20%22Brain%20scans%20reveal%20what%20happens%20in%20the%20mind%20when%20insight%20strikes.%22%20ScienceDaily.%20ScienceDaily%2C%2014%20May%202025.%20%3Cwww.sciencedaily.com/releases/2025/05/250514175431.htm%3E.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + two =