হাঁটু নয়, হাঁটার ভঙ্গি বদল

হাঁটু নয়, হাঁটার ভঙ্গি বদল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস ধীরে ধীরে মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। চল্লিশের পর প্রায় প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এই রোগে আক্রান্ত। এতে হাঁটুর হাড়ের মাঝে থাকা নরম কার্টিলেজ ক্ষয়ে গিয়ে হাড়ে-হাড়ে ঘর্ষণ বাড়ায়। ফলে ব্যথা, জড়তা ও চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়। এতদিন পর্যন্ত ওষুধ খাওয়া বা শেষ অবলম্বন হিসেবে হাঁটুর জয়েন্ট প্রতিস্থাপনই ছিল প্রধান সমাধান। কিন্তু সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি ইউটা , নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখালেন এক নতুন আলো। হাঁটার ভঙ্গি বদল করে নাকি ব্যথা কমে আসতে পারে ও জয়েন্টের ক্ষয় রোধ করা যায়।

‘দ্য ল্যানসেট রিউম্যাটোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক বছরের দীর্ঘ এই গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় কেবল পায়ের কোণ সামান্য ভেতরে বা বাইরে ঘোরালেই হাঁটুর ওপর চাপ কমে। এতে শুধু ব্যথা কমাই নয়, কার্টিলেজ ক্ষয়ও ধীরে হয়। অর্থাৎ, এটি কেবল সাময়িক আরাম নয়, দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষাও দিতে পারে।
পরীক্ষাটিতে ৬৮ জন অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের শুরুতে এমআরআই করা হয় এবং বিশেষ সেন্সরযুক্ত ট্রেডমিলে হাঁটানো হয়। মোশান-ক্যাপচার ক্যামেরায় ধরা পড়ে কারও ক্ষেত্রে পা ভেতরে ঘোরানো, আবার কারও ক্ষেত্রে বাইরে ঘোরানো হাঁটুর জন্য উপকারী। যাদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন কোনো উপকার আনেনি, তাদের বাদ দেওয়া হয়।
অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে ভাগ করা হয়। একদলকে তাদের স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই হাঁটতে বলা হয়। অপরদলের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট নতুন কোণে হাঁটার নির্দেশ দেওয়া হয় ,শেখানো হয় হাঁটার বিশেষ ভঙ্গি। ছয় সপ্তাহের ল্যাব ট্রেনিং শেষে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে নতুন ভঙ্গিতে হাঁটার অনুশীলন চালিয়ে যান।

এক বছর পর ফলাফলে দেখা যায়, যারা হাঁটার ভঙ্গি বদলেছিলেন, তাদের ব্যথা স্ব-ভঙ্গিতে হাঁটা দলের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই স্বস্তি অনেক সময় আইবুপ্রোফেনের মতো সাধারণ ওষুধের সমান, আবার কখনও শক্তিশালী ওষুধ অক্সিকন্টিনের কাছাকাছি । শুধু তাই নয়, তাদের হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয়ও ধীর গতিতে হয়েছে।
গবেষক স্কট উলরিখ বলেন, “এটি এমন এক সমাধান, যেখানে ওষুধ বা যন্ত্রের দরকার নেই। মানুষ কেবল নিজের দেহভঙ্গি সামান্য বদলালেই দীর্ঘমেয়াদি উপকার পেতে পারে।” অনেক অংশগ্রহণকারীও বলেছেন, “এখন এটি আমার শরীরের স্বাভাবিক অংশ হয়ে গেছে, সারাজীবন এর সঙ্গেই থাকতে পারব।”
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে মোবাইল অ্যাপ, স্মার্ট জুতো বা স্মার্টফোন ভিডিওর মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ আরও সহজ হবে। ফলে ফিজিওথেরাপি ক্লিনিকে না গিয়েই মানুষ নিজ বাড়ির কাছেই বা বাড়িতেই অনুশীলন করে হাঁটার ভঙ্গি সংশোধন শিখতে পারবেন।

যারা ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হন , তাদের হয়তো দশকের পর দশক ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকতে হয় জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের অপেক্ষায়। এই নতুন পদ্ধতি তাদের জন্য এক সহজ, নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: “Personalised gait retraining for medial compartment knee osteoarthritis: a randomised controlled trial” by Scott D Uhlrich, Valentina Mazzoli, et.al;(12.08.2025), The Lancet Rheumatology.
DOI: 10.1016/S2665-9913(25)00151-1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =