হাঁটু ব্যথার জন্য দায়ী -একটা ছোট্ট হাড়

হাঁটু ব্যথার জন্য দায়ী -একটা ছোট্ট হাড়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
হাঁটু ব্যথা

আমাদের পূর্বপুরুষরা শিকার করতে ক্ষিপ্র হরিণ ধাওয়া করত, হিংস্র পশুর হাত থেকে বাঁচতে প্রাণপণে দৌড়োতো। আর আমরা, সোফা থেকে ওঠার সময় ব্যথা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তরুণাস্থি ঘসটানোর শব্দের সাথে পরিচিত। হাঁটু ব্যথায় এখন মাঝবয়সী বেশিরভাগ মানুষই জর্জরিত। কেন? মানুষের হাঁটুর এক জটিল বিবর্তনীয় ইতিহাস রয়েছে। হাঁটুর আকার এবং আকৃতির বড়ো পরিবর্তন মানুষকে শুধুমাত্র সোজাভাবে হাঁটাচ্ছে না; তা মানুষকে অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স-দের, অন্যান্য হোমো গ্রুপ যেমন হোমো ইরেক্টাস এবং হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস থেকে আলাদা করেছে। প্রাকৃতিক নির্বাচন ও অন্যান্য বিবর্তনীয় ফ্যাক্টর যেমন র‍্যান্ডম মিউটেশন, বংশগতি আমাদের হাঁটুকে এমন আকার দিয়েছিল যা অন্যান্যদের থেকে আমাদের দুপায়ে দাঁড়াতে, বেশিক্ষণ হাঁটতে সাহায্য করেছে। আমাদের হাঁটুর নানা সমস্যা, কিন্তু তা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঘায়েল করতে পারেনি। ৬০০০ বছর আগে প্রাপ্ত আদিম মানুষের (হান্টার- গ্যাদারার) অবশেষ থেকে দেখা গেছে তাদের হাঁটুর বিশেষ সমস্যা ছিল না। কিন্তু ২০১৭ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বসে বসে কাজ করার জন্য আমাদের হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিসের সমস্যা ২.১ গুণ বেড়ে গেছে। দেখা গেছে ইউরোপে ৪৫ বছরের ওপরে এক তৃতীয়াংশ মানুষ হাঁটুর রোগে ভুগছেন। অস্থিসন্ধিগুলো স্থিতিশীল ও রক্ষা করার জন্য যে পেশি তা দুর্বল হয়েছে, হাড়ের মধ্যে ঘষা না লাগার জন্য কুশন হিসেবে ততোধিক দুর্বল তরুণাস্থি সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে সম্ভবত মানুষের আগের তুলনায় অনেক কম নড়াচড়া দায়ী। আগে, মানুষ হরিণের মতো ক্ষিপ্র পশু শিকারের জন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হত, যাতে তাদের শক্তিশালী পেশি তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু দেখা যায় কিছু মানুষ বসে কাজ করলেও অন্যান্যদের মতো তাদের অস্টিওআর্থারাইটিস হয় না। কেন? সেসাময়েড হাড়, এক ধরনের ছোটো হাড় যা টেনডন বা লিগামেন্টে নিক্যাপের মতো প্রোথিত থাকে। এই হাড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে কারোর শরীরের পুরো কঙ্কালতন্ত্রের মধ্যে প্রোথিত থাকতে পারে। মানে কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেসাময়েড হাড় থাকতে পারে, কিন্তু একই প্রজাতির সকল সদস্যের নাও থাকতে পারে। যেমন ল্যাটারাল ফ্যাবেলা, যা হাঁটুর পিছনে থাকে। বর্তমানে মানুষদের মধ্যে গড়ে ৩৬.৮০ শতাংশের হাঁটুতে এই হাড় দেখা যায়। গবেষকরা দেখেছেন, হাঁটুর পেছনে অবস্থিত মেডিয়াল ও ল্যাটারাল ফাবুলা প্রাইমেটদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছে যা আদিম মানুষকে সোজা হয়ে হাঁটতে সাহায্য করেছে। মানুষের ক্ষেত্রে এর বিবর্তন অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে আলাদা ছিল। আর এই হাড় যেমন মানুষকে সোজা হয়ে হাঁটতে সাহায্য করেছে, তেমন যাদের এই হাড় আছে, তাদের অস্টিওআর্থারইটিস হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। পুষ্টির বৈশ্বিক বৃদ্ধির ফলে মানুষ লম্বা হচ্ছে, তার ওজন বাড়ছে। আর তাই ল্যাটারাল ফ্যাবেলা বেশ সাধারণ হয়ে উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে আলাদা হলেও বিগত ১০০ বছরে ফ্যাবেলার উপস্থিতি তিনগুণ বেড়েছে। আর একটা বিষয় হল হাঁটু কিন্তু দাঁতের মতো নয়। স্থায়ী দাঁত অভিযোজিত হয়না, নষ্ট হয়ে যায়। হাঁটুর অবস্থা পুষ্টি ও ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যায়াম জরুরি।