হাঁপানির জৈবিক কার্যকারণ

হাঁপানির জৈবিক কার্যকারণ

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০০০ লক্ষ মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত হন। বেশিরভাগ মানুষ এতে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে চাপ অনুভব করেন। পরাগ এবং ধূলোকণা থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীর খুশকি, ধোঁয়া, ঠান্ডা বাতাস থেকে হাঁপানি হতে পারে। এমনকি প্রতিদিন হাঁপানিতে হাজারের ওপর মানুষ মারা যান। হাঁপানিতে শ্বাসনালীতে হাওয়া ঢোকার প্রবেশপথ বাধা পায়, ফলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ঢুকতে পারেনা। হাঁপানি হওয়ার জন্য ফুসফুসের নালীগুলো শক্ত হয়ে যায়, ফুসফুসের আস্তরণে প্রদাহ হয় এবং শ্লেষ্মা উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা কয়েক সপ্তাহ বা মাসাধিক কাল স্থায়ী হয়ে সমস্যাটা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর বিশেষ প্রতিকার নেই, কিছু চিকিৎসা, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় তা হাঁপানির লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শ্বাসনালীর রাস্তা খোলার জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং প্রদাহ কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞানীরা ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশন অধ্যয়ন করে দেখেছেন কীভাবে হাঁপানির সময়ে শ্বাসনালীর যান্ত্রিক সংকোচনের সময় আস্তরণের কোশগুলোকে ঘিরে ধরে। তারা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দেখেছেন, হাঁপানির সময় শ্বাসনালীর চারপাশে মসৃণ পেশি শক্ত হয়ে চেপে ধরে, যাতে ইঁদুরের শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে ফুসফুসের আস্তরণের ক্ষতি এবং প্রদাহ হয়। একইভাবে মানুষের ক্ষেত্রেও শ্বাসনালীর এই সংকোচন এবং আস্তরণ ধ্বংস হয়ে প্রদাহ ও অতিরিক্ত শ্লেষ্মা নিঃসরণ ঘটায় যা হাঁপানি আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাস নেওয়া কঠিন করে তোলে। কিংস কলেজ লন্ডনের কোশ জীববিজ্ঞানী জোডি রোজেনব্ল্যাট, গবেষণার সিনিয়র লেখক বলেছেন, হাঁপানিতে আক্রান্তদের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ, ক্ষত নিরাময় এবং আরও আক্রমণের কারণে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তিনি জানিয়েছেন, শারীরিক অসুবিধা প্রতিরোধের জন্য এই মৌলিক প্রক্রিয়া বোঝা তাদের দশ বছরেরও বেশি সময়ের কাজের পরিসমাপ্তি। তারা গ্যাডোলিনিয়াম নামে একটা যৌগ ব্যবহার করে ইঁদুরের শ্বাসনালীর আস্তরণে, এপিথেলিয়াল এক্সট্রুশনে আস্তরণের কোশ থেকে এই নিঃসরণ আটকাতে পেরেছেন। এই যৌগ মানুষের জন্য হয়তো নিরাপদ নয়, তবে এই অধ্যয়নের ভিত্তিতে ফুসফুসের আস্তরণ রক্ষার জন্য কীধরনের যৌগ ব্যবহার করতে হবে তা বোঝা গেছে, যা ভবিষ্যতে গবেষণায় কাজে লাগবে। এই গবেষণা সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।