হাঁপানি ও সিওপিডি সারাতে নতুন ওষুধ

হাঁপানি ও সিওপিডি সারাতে নতুন ওষুধ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলায় শীত এসে গেছে। তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতাও কমছে। এই সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ে। এই আবহাওয়ায় অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা হাঁপানি, পাশাপাশি সাধারণ সর্দিকাশি থেকে নিউমোনিয়া অথবা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগের জীবাণু কম তাপমাত্রায় বাতাসে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ধোঁয়ায় থাকা দূষিত ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে ফুসফুসে সংক্রমণ হয়। আর সেই সংক্রমণ থেকে হতে পারে শ্বাসকষ্ট। মানুষ ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ বা সিওপিডি-তে আক্রান্ত হন। এই রোগগুলো বর্তমানে এতটাই ব্যাপক যে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে, বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনও একজনের হাঁপানি বা সিওপিডির উপসর্গ বেড়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক দশক ধরে, এই রোগের চিকিত্সার জন্য প্রিডনিসোলোনের মতো স্টেরয়েডের ব্যবহার হচ্ছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত, এই ওষুধগুলো প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একইভাবে কাজ করে না। আবার অন্যদিকে এই ওষুধের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যে সব রোগীদের স্টেরয়েড দিয়ে চিকিত্সা করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের এক মাসের মধ্যেই উপসর্গগুলো খারাপ হতে থাকে, আরও চিকিত্সার প্রয়োজন হয়। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে গত ৫০ বছরে হাঁপানির চিকিৎসায় এই প্রথম স্টেরয়েড ছাড়াই ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও অবধি দেখা যায়নি।
তিন ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকার মধ্যে অন্যতম হল ইওসিনোফিল। এই ইওসিনোফিল কোশের সংখ্যা যদি বেড়ে যায়, তা হলে ফুসফুসে প্রদাহ শুরু হয়। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। ট্রায়ালে, ১৫৮ জন হাঁপানি বা সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করা হয়েছে। রোগীদের ওপর নতুন ওষুধ ‘বেনরালিজ়ুমাব’ দেওয়া হয়। নতুন ওষুধটি শরীরে ঢোকার পরে রক্তে মিশে গিয়ে ওই ইওসিনোফিল কোশের বৃদ্ধি বন্ধ করে। শ্বাসনালির প্রদাহ বন্ধ হয়, রোগী স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া শুরু করে। ওষুধটির দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সফল হয়েছে বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানী। হাঁপানি ও সিওপিডি-র যে রোগীদের ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল, তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পথে। ওষুধ খাওয়ার পরে তাদের শরীরে কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি। গবেষকদের মতে প্রেডনিসোলোনের তুলনায় বেনারলিজুমাবের আরও ভালো কারণ প্রেডনিসোলোনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়ে যায়। ফলে যাদের ডায়াবেটিস বা অস্টিওপোরোসিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেনারলিজুমাব বেশ ফলপ্রসূ। তবে ওষুধটি নিয়ে আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 4 =