
ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও জার্মানির একদল বিজ্ঞানী যৌথভাবে এমন এক নতুন সৌরপ্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা ভবিষ্যতে স্থিতিশীল জ্বালানি উৎপাদনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করবে। এ গবেষণায় টিন (Sn)- ভিত্তিক এক বিশেষ ধরনের পেরোভস্কাইট অক্সাইড উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাহায্যে সূর্যালোককে কাজে লাগিয়ে সরাসরি জল ভেঙে হাইড্রোজেন তৈরি করা সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফোটোক্যাটালিসিস, যা দূষণমুক্ত সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের নতুন দিশা।
হাইড্রোজেনই ভবিষ্যতের জ্বালানি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে গেলে প্রায়ই প্রাকৃতিক গ্যাস বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে হয়, যা পরিবেশ দূষণ ঘটায়। কিন্তু এই নতুন সৌর প্রযুক্তি একেবারেই কার্বনমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব। শুধু সূর্যের আলো ব্যবহার করেই হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যাবে এক্ষেত্রে।
নতুন আবিষ্কৃত “কোর- অ্যান্ড – শেল Sn(II)- পেরোভস্কাইট” সৌর উপাদানটিকে একটি বিশেষ অনুঘটকের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক পল ম্যাগার্ড ও তাঁর দলের তৈরী।
এই মিশ্র যৌগটি অক্সিজেন উৎপাদন বিক্রিয়ায় কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা হাইড্রোজেন তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলির একটি।ফলে, সৌরশক্তিকে সরাসরি রাসায়নিক জ্বালানিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নাল অব ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি সি জার্নালে।
ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুন্ঠার অ্যান্ডারসন জানান, এই টিন-ভিত্তিক যৌগকে কীভাবে জলে স্থিতিশীল রাখা যায় সে বিষয়ে এই গবেষণা একাই বিরাট অগ্রগতির বাহক। আর আমেরিকার বেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ম্যাগার্ডের মতে, এই নতুন উপাদান সূর্যালোকের বিস্তৃত শক্তি পরিসরকে শোষণ করে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।
বর্তমানে সৌরশক্তি ও পেরোভস্কাইট প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক গবেষণা চলছে। কারণ এগুলো সিলিকন-ভিত্তিক প্যানেলের তুলনায় সস্তা, অধিক কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প। এছাড়াও হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রচলিত উপায় যেমন – ইলেক্ট্রোলাইসিস( বিদ্যুতের সাহায্যে জল ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরী) বা তাপ-রাসায়নিক বিভাজন তুলনামূলক বেশি ব্যয়বহুল। কিন্তু এই নতুন সৌর প্রযুক্তি একাধারে খরচ-সাশ্রয়ী এবং দূষণমুক্ত।
এই নতুন সৌরপ্রযুক্তি আবিষ্কার শুধু বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নয়, বরং টেকসই ভবিষ্যতের আশার আলো। যদি এটি শিল্পপর্যায়ে সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে মানবজাতি আর জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল থাকবে না। আমরা পাবো এক পরিষ্কার, সাশ্রয়ী ও কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ।
সূত্র: “Chemical and Valence Electron Structure of the Core and Shell of Sn(II)-Perovskite Oxide Nanoshells” by Gowri Krishnan, Shaun O’Donnell,et.al; 2 October 2024, The Journal of Physical Chemistry C.
DOI: 10.1021/acs.jpcc.4c04169