
বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন যা জীবাশ্মের হাড়ের টুকরো থেকে প্রজাতি শনাক্তকরণে সক্ষম। তাঁরা সম্প্রতি কয়েকটি অস্ট্রেলীয় বৃহৎ প্রাণীর কঙ্কালের মধ্যে সংরক্ষিত প্রাচীন কোলাজেন প্রোটিন থেকে বিশেষ করে পেপটাইড মার্কার শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।এই গবেষণাটি ফ্রন্টিয়ার্স ইন ম্যামাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার তিনটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী—জাইগোমাতুরাস ট্রাইলোবাস (একটি বিশালাকার থলেযুক্ত প্রাণী, যার আকার প্রায় জলহস্তীর মতো), প্রোটেমনোডন মামকুরা (একটি বিশাল, ধীরগতির ক্যাঙ্গারু), এবং প্যালোরচেস্টেস আজায়েল (একটি অদ্ভুত আকৃতির অঙ্কগর্ভ বা মারসুপিয়াল যার ছিল লম্বা জিভ ও বড় নখ)। এই তিনটির ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষয়প্রাপ্ত কঙ্কাল থেকে তাদের সঠিক পরিচয় নির্ণয় করা। অতীতে এটা সম্ভব ছিল না কারণ উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে সাধারণত ডিএনএ টিকে থাকে না। কোলাজেন কিন্তু ডিএনএর তুলনায় অধিক সময় টিকে থাকে, তাপমাত্রা ও পরিবেশ প্রতিকূল হলেও।
জুও আর্কিওলজি বাই মাস স্পেকট্রোমেট্রি বা জুও এমএস নামক পদ্ধতির মাধ্যমে এই প্রোটিন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট পেপটাইড মার্কার চিহ্নিত করেছেন, যা দিয়ে ওই প্রজাতিগুলিকে আলাদা করা সম্ভব। তারা দেখতে পান যে, এই পেপটাইড মার্কারগুলির সাহায্য নিয়ে প্রোটেমনোডন প্রজাতিকে বর্তমান পাঁচটি ক্যাঙ্গারু গণ এবং একটি বিলুপ্ত গণ(জেনাস) থেকে পৃথক করা যায়। জাইগোমাতুরাস ওপ্যালোরচেস্টেস- এর কোলাজেনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তারা একে অপরের থেকে স্পষ্টভাবে পৃথক নয়, কারণ কোলাজেনে বিবর্তনজনিত পরিবর্তন খুব ধীরে ঘটে।
এই নতুন মার্কারগুলির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার দৈত্যাকার প্রজাতির জীবাশ্ম শনাক্তকরণের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে দেশটির গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে যেখানে ডিএনএ সংরক্ষণ সাধারণত হয় না। এই গবেষণা ভবিষ্যতে আরও প্রজাতি যেমন -ডিপ্রোটোডন (সবচেয়ে বড় অঙ্কগর্ভ বা মারসুপিয়াল প্রাণী) এবং থ্যালাকোলিও (সবচেয়ে বড় অঙ্কগর্ভ শিকারি) সম্পর্কেও গবেষণার পথ সুগম করবে।
এই প্রোটিন ভিত্তিক গবেষণা শুধু যে বিলুপ্ত প্রাণীর পরিচয় নির্ণয়ে সহায়ক তা নয়, এটি প্রাচীন পরিবেশ ও মানব ইতিহাস সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে।