বুরকিমা ফাসো। পশ্চিম আফ্রিকার এক ছোট্ট দেশ। ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল মেয়ে হাতিটাকে। তখন তার বয়স? মাত্রই দুই থেকে তিন মাস! গ্রামবাসীরা তাকে যখন দেখেছিল, বাচ্চা সেই হাতি তখন পাগলের মতো মা-কে খুঁজে খুঁজে না পেয়ে, জল না খেয়ে গুরুতর অসুস্থ। হয়ত রাতের অন্ধকারে জঙ্গল পেরনোর সময় সে তার মা এবং অন্য হাতির দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। হাতিটি বাঁচত না, যদি না গ্রামবাসীরা তাকে উদ্ধার করে জল খাইয়ে লালন পালন করত।
এখন সেই বাচ্চা হাতির বয়স চার বছর। বুরকিমা ফাসোতেই সে গ্রামবাসীদের ও বনদফতরের কর্মীদের স্নেহে সে বড় হয়ে উঠেছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নানিয়া’। তার বন্ধু হয়েছে সাদা-কালো একটি ভেড়া! যার নাম হুইস্টি। গ্রামবাসীরাই নানিয়াকে খাওয়াতেন। একটি স্থানীয় দুধ বিক্রেতা নানিয়ার জন্য দুধ পাঠাতেন। কিন্তু হাতির খাওয়া কি আর মানুষের মতো? স্বাভাবিকভাবে খাবারের যোগানে টান পড়ছিল। গ্রামের মানুষ কোথায় যাবেন? কী করবেন? সেই অবস্থায়, পশুপ্রাণী সংরক্ষণের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন নানিয়ার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসে। তারাই শুরু করে ওকে লালনপালন করা।
কিন্তু নানিয়ার উদ্ধারকারীদের কাছে এখন অন্য চ্যালেঞ্জ। নানিয়াকে কি আবার জঙ্গলে ফেরানো যাবে তার মা-র কাছে? মানুষের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষা হয় ঠিক সেরকম, নানিয়ারও ডিএনএ পরীক্ষা করা হল! এবং গবেষকরা জানতে পারলেন, নানিয়া আর তার আত্মীয়রা সকলেই বন্য হাতি। শুধু তাই নয়, নানিয়ার মা যে আশেপাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটাও গবেষকরা জানতে পেরেছেন! নানিয়ার উদ্ধারকারীদের স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তি যে, দ্রুতই মেয়ে তার মা-র কাছে ফিরে যেতে পারবে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের গবেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে, আফ্রিকার জঙ্গল থেকে অনেক বাচ্চা হাতি তাদের বাবা-মা-র থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদের অনেককে ফেরানো যায়নি। নানিয়ার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা কিন্তু নতুন দিগন্তের সন্ধান দিল। এই পরীক্ষা আগামীদিনে হাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখবে।