কেনিয়ার সাভো ন্যাশনাল পার্কের বাইরে ভেতরে হাতিরা খাবার, জলের সন্ধানে, এমনকি সঙ্গী খোঁজার জন্যও ঘুরে বেড়ায়। তারা প্রায়শই আশেপাশের খামারের ফসলের গন্ধে সেখানে হাজির হয়। ফলে চাষীদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়, তারা বিপদে পড়ে। এই হাতিদের আটকাতে, মানুষের আয়ে যাতে টান না পড়ে, মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ যাতে এড়ানো যায়, তা নিয়ে সেভ দ্য এলিফ্যান্টস (এসটিই) কাজ করছে। টানা ন বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে কেনিয়ার ছোটো ছোটো খামারে যেসমস্ত হাতি প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তারা মৌচাকের বেড়া এড়িয়ে চলে। এই প্রাকৃতিক বাধা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষ কমাতে সাহায্য করেছে। ফলে সরাসরি তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কনজারভেশন সায়েন্স অ্যান্ড প্র্যাকটিস জার্নাল-এ বলা হয়েছে এই ধরনের প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান, কৃষকদের জীবিকা এবং স্থানীয় বন্যপ্রাণী উভয়কেই রক্ষা করতে পারে। সেভ দ্য এলিফ্যান্টস (এসটিই) দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায় ওয়াইল্ড লাইফ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরটিআই), কেনিয়া ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস) এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যুক্ত। তবে গবেষকরা এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে প্রাকৃতিক প্রাণি-বাসভূমির ক্ষতি হলে, বারেবারে খরা হলে কিন্তু মৌমাছি-বেড়ার বাধার দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা কমে যাবে।
২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কেনিয়ায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতি ও পরিকাঠামো প্রসারিত হওয়ায় হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল কমে গেছে। তাই মানুষ এবং হাতির মধ্যে টেকসই সহাবস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সংরক্ষণের ভারসাম্য রাখার সমস্যা কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস)-এর সামনে একটি চ্যালেঞ্জ। সেভ দ্য এলিফ্যান্টস প্রোগ্রাম এই ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনে হাতিদের নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খামার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এখানে খামারের কাছে পরপর খুঁটি বসিয়ে কয়েকটা করে মৌচাক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে হাতিরা সরাসরি বাধা পায়। হাতি তার শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি দিয়ে মৌচাকের উপস্থিতি টের পায়। আগেই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, হাতি মৌমাছিকে এড়িয়ে চলে, মৌমাছির ডানার শব্দ, মৌমাছির কামড়ের ভয়ে তারা একটু সরে থাকার চেষ্টা করে। তাদের গায়ের চামড়া যথেষ্ট মোটা, ফলে মৌমাছিরা গায়ে হুল ফোটাতে না-পারলেও, মোটেও তারা ছেড়ে দেবার পাত্র নয় – তারা হাতির শুঁড়ে, চোখে, মুখে হুল ফোটানোর চেষ্টা করে। এই স্বাভাবিক মৌমাছি-ভীতিকে কাজে লাগিয়ে এখন হাতিদের দূরে রাখা যাচ্ছে এবং মানুষ আর বন্যপ্রাণীর মধ্যে সহাবস্থানও বজায় রাখা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত হাতি ঠেকানোর জন্য আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৪০০০-এরও বেশি মৌচাক ঝোলানো হয়েছে। এইসব মৌমাছি-বেড়াগুলো একই সঙ্গে পরাগায়নেও সাহায্য করছে। আর মৌচাক থেকে কৃষকরাও মধু ও মোম উৎপাদন করে আয় করতে পারছেন।