হারিয়ে যাওয়া বাকশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট

হারিয়ে যাওয়া বাকশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ আগষ্ট, ২০২৩

যারা কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য বিজ্ঞানীরা আশার আলো দেখিয়েছেন। নেচার জার্নালে প্রকাশিত বিজ্ঞানীরা সফলভাবে ব্রেন ইমপ্লান্ট এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে দুজন পৃথক রোগীর হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন। একজন রোগীর স্ট্রোকের ফলে , অন্য রোগীর অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (ALS)-এর ফলে কথা বলার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
কথা বলানোর জন্য ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদনের বিষয়ে চিন্তা করতে বলা হয়, তখন ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির স্নায়বিক কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। তারপর সেই কাজটি সম্পাদন করার জন্য হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যারকে প্রশিক্ষণ দিতে এই রেকর্ডিংগুলো ব্যবহৃত হয়; উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন ব্যক্তি তার হাত বাঁকানোর বিষয়ে চিন্তা করেন তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তার কৃত্রিম হাত বাঁকানো যায়।
প্রতিটি ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ভিন্ন, তাই প্রতিটি রোগীর জন্য তাদের নিউরাল সংকেতগুলো ডিকোড করার জন্য যন্ত্রপাতিকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। যদি ভাষার কথাই বিবেচনা করি তবে ভাষা নিজেই খুব জটিল, মস্তিষ্কের ইন্টারফেস, বা নিউরোপ্রোসথেটিক, যা একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনাকে কথ্য শব্দে অনুবাদ করতে পারে তা সম্পন্ন করতে পারা দারুণ এক কৃতিত্ব। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মস্তিষ্কের ইন্টারফেস প্রযুক্তিতে দুর্দান্ত অগ্রগতি হয়েছে, তবে এই প্রযুক্তি সকলের ক্ষেত্রে এক নয়।
দুটি আলাদা আলদা ক্ষেত্রে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যলয় ও স্ট‍্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন রোগী অ্যান ও বেনেটের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড অ্যারে স্থাপন করা হয়েছিল – বেনেটের মস্তিষ্কে ১২৮ টি ইলেক্ট্রোড এবং অ্যানের মস্তিষ্কে ২৫৩ টি। এরপর তারা প্রত্যেকে শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে বিভিন্ন শব্দ এবং বাক্য বলার বিষয়ে তাদের চিন্তা করতে হয়। অ্যানের ভাণ্ডারে ১০২৪ টি শব্দ আছে, আর তিনি মুখের অভিব্যক্তি তৈরি করার কথাও ভেবেছিলেন। AI -কে শব্দগুলো চিনতে প্রশিক্ষিত করার বদলে ধ্বনি, যা মৌলিক শব্দ একক, তা চিনতে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। এটা AI -কে শব্দ বোঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় ইউনিটের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে।
গবেষকরা এই ডেটা এবং অ্যানের স্ট্রোকের আগে বলা কথার রেকর্ডিং ব্যবহার করেছেন, যাতে একটি ভার্চুয়াল অবতার তৈরি করা যায়, যা তার কণ্ঠে কথা বলে৷ শেষ পর্যন্ত, তার অবতারের মাধ্যমে, অ্যান তার চারপাশের লোকদের মতোই দ্রুত যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই গবেষণার ফলাফল চারপাশের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি নতুন আশার সঞ্চার করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − four =