
সুইটজারল্যান্ডের লোচেনটাল উপত্যকায় অবস্থিত ব্লাটেন, এক টুকরো নিঃশব্দ স্বর্গ, মুহূর্তেই রূপ নিল জনশূন্য ধ্বংসস্তূপে। বির্চ হিমবাহের একটি বিশাল অংশ আচমকা ভেঙে পড়ল আল্পসের কোলে লুকিয়ে থাকা এই গ্রামটির উপর। ধ্বংস হয়ে যায় গ্রামটির প্রায় ৯০%। প্রায় ১০ মিলিয়ন টন বরফ, কাদা ও পাথর একসাথে নীচে নেমে আসে। এই বিপর্যয় একটি ৩.১ মাত্রার মাঝারি ভূমিকম্পের মতনই কম্পন তৈরি করে। তবে এই বিপর্যয়ের ঠিক আগেই গ্রামবাসীদের সতর্ক করা সম্ভব হয়েছিল। ঘটনার ৯ দিন আগেই প্রায় ৩০০ জন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। কেবল এক মেষপালক প্রৌঢ় এখনও নিখোঁজ। এই হিমবাহ ধসে যে কেবলমাত্র স্থলভাগেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নয়, প্রবল ধ্বংসস্তূপ লোনজা নদীকে আটকে দিয়ে সেখানে একটি অস্থায়ী হ্রদ গঠন করেছে। এই হ্রদের জল আবার নিচু এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়ে সৃষ্টি করতে পারে বন্যা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘এ দুর্যোগ শেষ নয়, হয়ত কেবল সূচনা মাত্র। ’ জলবায়ু পরিবর্তনকে এই ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক দশকে গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে আর তাতেই সুইটজারল্যান্ডের হিমবাহগুলো ক্রমশ গলে যাচ্ছে। আর পর্বত হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। হিমবাহ গবেষক ড. মাইলেন জ্যাকেমার্ট বলেন, “এই ধরনের বড় হিমবাহ ধস বিরল, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এগুলোর ঘনত্ব ও তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন নাহলে সামনে আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।” এদিকে, সুইস সরকারের ফেডারেল কাউন্সিলর আলবার্ট রোস্তি বলেন, “প্রকৃতি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আজ আমরা একটি বাস্তব ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম যা আমাদের বাকরুদ্ধ করেছে। পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে।” ঘটনাটি আমাদের সামনে একটি কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরে- পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভঙ্গুর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে কিরূপ ধংসাত্মক হতে পারে তা বর্তমানেই দেখা যাচ্ছে। বরফের চাদরে মোড়া শান্ত গ্রামটিকে এখন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়ানক বার্তা- প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে রেহাই নেই কারুর। এটি শুধুই সুইস আল্পসের গল্প নয়, সমগ্র পৃথিবীর কাছে এ এক সতর্কবাণী।