
২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রাইস ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী সাইমিন হাও ও ডমিনিক বয়ার বিশ্বব্যাপী হিমবাহ গলনের সামাজিক প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। এই প্রবন্ধটি সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে একটি সমসাময়িক বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে মিল রেখে দেখানো হয়েছে যে বর্তমান জলবায়ু নীতির অধীনে বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি হিমবাহের ভর শতাব্দীর শেষ নাগাদ অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
হিমবাহ গলনের পরিসংখ্যান প্রায়শই বিমূর্ত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হতে পারে। কিন্তু হিমবাহ আমাদের পদতলের ভূমিকে আক্ষরিক অর্থেই গঠন করেছে, এবং এটি প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জল সরবরাহের উৎস। যারা হিমবাহের কাছে বসবাস করেছেন, তাদের জন্য এই বরফরাশির কৃষ্টি ঘটিত গুরুত্ব গভীর, এটি প্রাকৃতিক ও সামাজিক জগতের মধ্যকার মৌলিক সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো সাধারণত হিমবাহ গলনের পরিসংখ্যান এবং ভৌত প্রভাব তুলে ধরে। কিন্তু হাও এবং বয়ার মানুষের জীবনে এর প্রভাব এবং কৃষ্টিগত তাৎপর্যকে গুরুত্ব দেন। তাঁরা জানান, হিমবাহ শুধু জল সরবরাহের উৎস নয়, কোটি কোটি জীবন তথা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হিমবাহ একদিকে যেমন ভূপ্রাকৃতিক রূপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে মানুষের কৃষ্টি, ধর্মীয় আচার এবং পরিচয়বোধের অংশ হয়ে উঠেছে।
গবেষকদের প্রবন্ধে “বিশ্ব গ্লেসিয়ার হতাহত তালিকা ” নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ইতিমধ্যে গলে যাওয়া বা গলনের ঝুঁকিতে থাকা হিমবাহগুলোর নাম ও সামাজিক প্রেক্ষাপট সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি জলবায়ু বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং স্থানীয় মানুষের কাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি স্মারক প্রচেষ্টা।বয়ার বলেন, বিগত পাঁচটি বছর ছিল হিমবাহের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় । প্রতি বছর ২৭৩ বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে, অথচ এই বিপুল ক্ষতিও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং মানুষের অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি ও আবেগকে সামনে আনলে তবেই সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ সম্ভব।
রাষ্ট্র সংঘ ২০২৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। হাও ও বয়ার আশা করছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে বিশ্বের অর্ধেক হিমবাহ এখনো রক্ষা করা সম্ভব, তাদের সাথে সংযুক্ত বাস্তুতন্ত্র, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার ক্ষয়ও রোধ করা সম্ভব।বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে আমরা যদি একসঙ্গে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করি তাহলে আমাদের এখনও বিশ্বের অবশিষ্ট অর্ধেক হিমবাহ সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, কিন্তু এখনও আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনেক কিছু সংরক্ষণ করা যেতে পারে।