হিমালয় পর্বতমালা তুষার হারাচ্ছে

হিমালয় পর্বতমালা তুষার হারাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
হিমালয় পর্বত

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৯০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, ওম পর্বত ভারত, চীন এবং নেপালের সীমান্তবর্তী হিমালয় পর্বতমালার এক শৃঙ্গ। হিমালয়ের এই শৃঙ্গে তুষারে ‘ওম’ আকৃতি তৈরি হয়, যা শুধুমাত্র ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে দৃশ্যমান। ধারচুলা উন্নয়ন ব্লকের ব্যাশ উপত্যকায়, কৈলাস মানসসরোবর যাত্রার পথে ওম পর্বত একটা গুরুত্বপূর্ণ থামার স্থান। ২০১৯ সালে ওম পর্বত পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ফলে এখানে যাত্রা সহজ হয়েছে। চীন সীমান্তের কাছে লিপুলেখ পর্যন্ত রাস্তা প্রসারিত হওয়ার পরে পর্যটকদের সংখ্যাও বেড়েছে।
স্থানীয় মানুষজন বলছেন, এ বছর প্রথম ওম পর্বতের শৃঙ্গ বরফে ঢাকা পড়েনি। এই পাহাড়ের চূড়ায় সারা বছর বরফ দেখা যেত। তাদের দৃঢ় ধারণা রাস্তা হওয়ার ফলে গাড়ির ধোঁয়ায় শীতকালে কম তুষারপাত হয়েছে। যার ফলে ওম পর্বতের চূড়ায় কোনো বরফ নেই। তার সাথে তারা বলছেন গত বছর তারা তীব্র গরম অনুভব করেছেন এমনকি বর্ষাতেও গরমের খামতি ছিল না। বর্ষার পরেই ওম পর্বতে তুষার পড়ে ‘ওম’ চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠত। কিন্তু এই চিহ্ন দেখা না যাওয়াতে স্থানীয় মানুষদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ধার্মিক কারণ ছাড়াও তাদের ভীতির অন্য কারণ রয়েছে। তারা বলছেন, কৈলাস পর্বতেও বরফ আগের তুলনায় কম। তাদের ভয় যদি এই পর্বতগুলোতে বরফ না থাকে তবে পর্যটকরা আর আসবেন না, আর স্থানীয় মানুষদের রুটি রুজিতে টান পড়বে।
আলমোড়ার জিবি পন্ত ইনস্টিটিউটের পরিবেশ মূল্যায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন জেসি কুনিয়াল বলেছেন যে ওম পর্বত থেকে তুষার অদৃশ্য হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ লক্ষণ। বিশ্বব্যাপী ঋতু পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। যেসব এলাকায় আগে বৃষ্টিপাত হত না সে সব জায়গায় এখন বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। এই সব কারণ হিমবাহকেও প্রভাবিত করছে। তিনি বলছেন ওম পর্বত থেকে তুষার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এবং হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়ার পেছনে স্থানীয় পরিবেশগত কারণ, উল্লেখযোগ্য হারে দূষণ দায়ী। তিনি উল্লেখ করেছেন বনে ঘন ঘন দাবানল লাগা ও তার ব্যাপ্তি বাড়ছে। এই দাবানলের কালো কার্বনে হিমবাহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ও পাহাড়ে তুষার জমতে বাধা পাচ্ছে।
জাতিসংঘের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, হিমালয় অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ হিমবাহ বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য হুমকির সম্মুখীন। ২০০০ সাল থেকে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে হিমবাহ গলে যাওয়ার হার বেড়েছে। হিমবাহগুলো বার্ষিক ৫৮ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে, যা ফ্রান্স এবং স্পেনের সম্মিলিত জল খরচের সমান। প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখলে হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (ICIMOD), বলছে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক অনুপাতের তুলনায় অনেক বেশি। গত শীতে এই অঞ্চলে, বিশেষত পশ্চিম হিমালয়ে রেকর্ড কম তুষারপাত হয়েছে। যার কারণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। হিমবাহ বিশেষজ্ঞ অনিল ভি কুলকার্নি জানিয়েছেন, দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় হিমালয়ের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এতে পর্বতের চূড়ার তুষার আরও দ্রুত গলে যাচ্ছে। গত ৩০-৪০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ ও গবেষণা দেখায় যে তুষারপাতের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টিপাত। এতে হিমবাহের গলন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তার মতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তুষারপাত হ্রাসের বর্তমান ধরন অব্যাহত থাকলে হিমবাহ গলনের হার আরও বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + six =