
শিশুকালে অন্যকে সাহায্য করা, ভাগাভাগি করে নেওয়া, অন্যের যত্ন নেওয়া প্রভৃতি হৃদয়বান আচরণের অভ্যাস গড়ে উঠলে কিশোর বয়সে খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । যুক্তরাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জন্ম থেকে প্রায় দুই দশক ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিশুদের আচরণ ও খাবার অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ৫, ৭ ও ১১ বছর বয়সের শিশুদের বাবা-মা তাদের সহযোগী ও যত্নশীল হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। পরে ১৪ ও ১৭ বছর বয়সে ঐ শিশুদের ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস হয়েছে। গবেষণার প্রধান ড. ফারা কুরেশি বলেন, “আমরা প্রায়ই শিশুদের ভুলের দিকে তাকাই, কিন্তু তারা চায় বড়োরা তাদের কৃতিত্বর তারিফ করুক।” প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবার স্বাস্থ্যগত সুবিধার কথা আগে থেকেই জানা ছিল। এখন দেখা হচ্ছে ছোটদের ক্ষেত্রেও এমন প্রভাব রয়েছে কি না। ফলাফল থেকে দেখা গেছে, যারা ছোট থেকেই হৃদয়বান আচরণ করেছে, তাদের কিশোর বয়সে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি। কিশোর বয়সই ভবিষ্যতের খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তি গড়ে তোলে। জুলিয়া কে. বোহেম ব্যাখ্যা করেছেন, অন্যের প্রতি সহানুভূতি, ভাগ করে নেওয়া, সাহায্য করা ও স্বেচ্ছাসেবী কাজ প্রভৃতি হৃদয়বান আচরণ যেমন শিশুদের সামাজিক বন্ধন ও মানসিক শক্তি বাড়ায়, তেমনি স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়ক। গবেষকরা বলছেন, সহমর্মিতা শেখানো মানে পুষ্টি শিক্ষা বাদ দেওয়া নয়, বরং সেটাই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার উপায় হতে পারে। এ গবেষণায় পরিবারের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, পিতামাতার বৈবাহিক সম্পর্ক ও ছোটবেলার খাবারের অভ্যাস সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হলেও বাচ্চা মানুষ করার ধরণ বা ঘরের পরিবেশ পরিমাপ করা হয়নি, যা হৃদয়বত্তার সঙ্গে খাদ্যাভাসের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। তাই একে সরাসরি কারণ হিসেবে দাবি করা যায় না। শিশু-কিশোর উন্নয়নে এই গবেষণা নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। স্কুল ও যুব সংগঠনগুলোতে সহযোগিতা, সেবামূলক কাজ ও যত্নশীল আচরণ করতে উৎসাহিত করা শুধু চরিত্র গঠন নয়, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। হার্ভার্ডের ড. লরা ডি. কুবজানস্কি বলেন, “শিশুদের সহযোগিতা ও হৃদয়বত্তার মূল্যবোধ থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল গড়ে তোলা যায়। এগুলো শুধু চরিত্র নয়, স্বাস্থ্যের বিনিয়োগ।” কুরেশি উল্লেখ করেন, আজকের দিনে সহমর্মিতার মূল্য অনেক সময় কমিয়ে দেখা হয়। কিন্তু এই গবেষণা দেখিয়েছে, হৃদয়বত্তা ও দয়া, শুধু গ্রহণকারী নয়, দাতার জন্যও শক্তি হিসেবে কাজ করে। পুষ্টির আলোচনায় ভিটামিন, মিনারেল ও ক্যালরির হিসাব বেশি গুরুত্ব পায়, কিন্তু অভ্যাস গঠনে আবেগ, সম্পর্ক ও সহমর্মিতাও গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র : Kind Kids, Healthy Teens: Child Prosociality and Fruit and Vegetable Intake by
Farah Qureshi, et.al ; American Journal of Preventive Medicine(August 11 , 2025)