হৃদরোগের টিকা

হৃদরোগের টিকা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ মার্চ, ২০২৫

সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন টিকা তৈরি করেছেন, যা আমাদের রক্তনালিতে চর্বির আস্তরণ জমাকে বাধা দিতে পারে। এই চর্বির আস্তরণ ধীরে ধীরে জমে শক্ত হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এই সমস্যাকে বলা হয় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। এটি পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে একটি। নতুন আবিষ্কৃত টিকাটি সফল হলে, ভবিষ্যতে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।এথেরোস্ক্লেরোসিস হলে ধীরে ধীরে চর্বি ও অন্যান্য উপাদান জমে রক্তনালিগুলো সরু হয়ে যায়। তখন শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ত্বক, এনজাইম ও অ্যান্টিবডি এই সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু কখনও কখনও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভারসাম্য হারালে প্রদাহ তৈরি হয়ে রোগ বেড়ে যায়। রক্তনালিতে চর্বি জমে বাধার সৃষ্টি হলে স্ক্যানের মাধ্যমে তা ধরা পড়ে। এই সমস্যা প্রশমনে চিকিৎসকরা সাধারণত অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেন। এই প্রক্রিয়ায় সরু হয়ে যাওয়া রক্তনালিকে খোলা রাখতে ছোট্ট একটি নল বসানো হয় যাতে রক্ত সহজে প্রবাহিত হতে পারে। অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, টিকা ব্যবহার করে এই রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা সম্ভব কিনা। নতুন গবেষণাটিতে বিজ্ঞানীরা এমন একটি টিকা আবিষ্কারের কথা বলেছেন, যা ইঁদুরের এথেরোস্ক্লেরোসিস কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই গবেষণার ফলাফল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা বলেছেন তাঁদের তৈরী ন্যানো নকশা ও পরীক্ষার ফলাফল ভবিষ্যতে এথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এর আগে গবেষকরা এমন অনেক প্রোটিন খুঁজে পেয়েছেন যা শরীরে প্রদাহ কমাতে ও এথেরোস্ক্লেরোসিস রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। সম্প্রতি পিটু টেন (p2 10) নামে একটি বিশেষ প্রোটিন পাওয়া গেছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ও হৃদরোগের কারণস্বরূপ ধমনির ব্লক (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস) কমাতে সাহায্য করে। নতুন টিকাটি এই প্রোটিনটি ব্যবহার করে যার ফলে শরীর নিজেই এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।এই টিকায় দুটি ছোট কণা ব্যবহার করা হয়। একটিতে পিটু টেন(p2 10) প্রোটিন থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে। আর অন্যটিতে বিশেষ এক সহায়ক উপাদান থাকে যা টিকার কার্যকারিতা আরও বাড়ায়।গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকাটি ইঁদুরের ধমনীতে জমে থাকা চর্বি কমাতে সাহায্য করেছে।এই টিকা শরীরে ঢুকে একটি বিশেষ অ্যান্টিজেন প্রোটিন ও শক্তিবর্ধক উপাদান ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। এটি শরীরের বিশেষ আনুষঙ্গিক কোষ ডেনড্রিটিক-কে সক্রিয় করে , যা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।টিকাটি শরীরে ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটিয়ে পিটু টেন(p2 10) প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে।গবেষকরা বলছেন, এই বিশেষ ন্যানো টিকা, দুটি উপায়ে কাজ করে এবং এটি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকরী।এ বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা
বিশদে গবেষণা করতে চান। তা থেকে বোঝা যাবে এই টিকা ইঁদুরকে কতদিন পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 11 =