একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে নীরব ঘাতক ‘দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক’। প্রথমবারে কেউ বেঁচে গেলেও, দ্বিতীয়বারে সে সুযোগ কম মেলে। সূর্যালোক হতে পারে এই হৃদরোগের নতুন প্রতিষেধক। ইন্টারমাউন্টেন হেলথ-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, রক্তে সঠিক পরিমাণ ভিটামিন D₃ ধরে রাখতে পারলে, দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের নাম ‘টার্গেট ডি’। নামের মধ্যেই আভাস লুকিয়ে। গবেষকরা ৬৩০ জন রোগীকে টানা ছয় বছর ধরে ফলো-আপে রাখেন, যাদের ইতিমধ্যেই একটি হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। তাঁরা প্রথমেই লক্ষ্য করেন, এদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা আশ্চর্যজনকভাবে কম, ৪০ mg/mL-এর নীচে। তারা অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করেন। এক দলকে সাধারণ চিকিৎসা এবং আরেক দলকে দেওয়া হয় সূক্ষ্মভাবে নির্ধারিত ভিটামিন D₃-ডোজ। বেশিরভাগই প্রতিদিন ৫,০০০ IU এর মতন বড় ডোজ পান। এটি কিন্তু প্রচলিত ডোজের প্রায় পাঁচগুণ। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, ভিটামিন ডি নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা প্রায় ৫২ শতাংশ কমে যায়। এমনকি কোনও বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিতও মেলেনি। ভিটামিন ডি শুধু হাড়ের জন্য উপকারী নয়। এটি কোষের প্রদাহ, রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা, এমনকি হৃদপেশির সংকোচনেও ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকলে লুকিয়ে থাকা প্রদাহও কমে যায়। আর সেই কারণেই হৃদপিণ্ডের দ্বিতীয়বার ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।
আগের বহু ট্রায়ালে ভিটামিন ডি-কে অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেখানে অংশগ্রহণকারীদের সকলকেই একই ডোজ দেওয়া হয়েছিল। টার্গেট ডি-তে কিন্তু ডোজ নির্ধারিত হয়, প্রতিটি রোগীর রক্ত অনুপাত অনুযায়ী। নিয়মিত অনুপাত দেখেই স্থির করা হয় ভিটামিন ডি ডোজ। একে বলা হয়, ‘ব্যক্তিগতভাবে নির্ধারিত পুষ্টিনীতি’। চিকিৎসা-ধারায় এটি একেবারে নতুন সূচনা। গবেষণাটি ২০২৫ সালের আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক সেশনস-এ উপস্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই ছিলেন মার্কিন বংশোদ্ভূত। ভারত-বাংলাদেশের মতো সূর্যালোক-সমৃদ্ধ দেশগুলোতেও মানুষ ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভোগে। কারণ আমরা এখন সূর্যের নীচে কম যাই, কাজ করি ঘরে, ত্বকে আলো পৌঁছায় না। শহরের ধুলো-ধোঁয়া, স্কিনকেয়ার-আসক্তি, আর ভিটামিন-অবহেলা সব মিলিয়ে আমরা নিজের অজান্তেই হৃদয়ের জন্য বিপদ তৈরি করছি। তাই এই একই ফল আফ্রিকান, এশীয় বা দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীত হবে কিনা, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তবে ভিটামিন ডি-র মাত্রা আবার অতিরিক্ত হয়ে গেলে শরীরে ক্যালসিয়াম বিপর্যয়, কিডনি স্টোন বা টক্সিসিটিও ঘটতে পারে। তাই নিজে নিজেই ডোজ ঠিক করা বুদ্ধির পরিচয় হবে না। এ গবেষণা যেন হৃদরোগ চিকিৎসার ইতিহাসে এক নতুন কৌশল, এক বিজ্ঞানভিত্তিক অনুশাসন এনে দিল। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, লক্ষ্যভিত্তিক মাত্রা-নিয়ন্ত্রণ, ধারাবাহিক ফলো-আপ-ই হতে পারে সুস্থ হৃদয়ের চাবিকাঠি।
সূত্র : New Vitamin D Strategy Cuts Second Heart Attack Risk in Half By Intermountain Health; November 11, 2025.
