বিজ্ঞান আর পরিবেশ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা মনে করলে ২০২০-র মত ২০২১-এর শিরোনামেও প্রথমে থাকবে বিশ্বজোড়া কোভিড-১৯-এর নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্টের দাপট আর তাকে প্রতিরোধ করার টীকার আবিষ্কার আর বিভিন্ন রকমের চেষ্টার কথা। এবছরকে ফিরে দেখতে চাইলে কোভিডের পাশাপাশি নাসার মঙ্গল অভিযান, মহাকাশে পর্যটন ব্যবসার চেষ্টা, আদিমতম মানুষের পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া, বিশ্ব উষ্ণায়নে হেরিটেজ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অবক্ষয়-এই ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়তে পারে। সেভাবেই নীচে সাজিয়ে দেওয়া হল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি-
কোভিডের দুই ভ্যারিয়ান্টঃ
গতবছরের সেরা ঘটনার শিরোনামে এক থেকে দশ নম্বরে করোনা ভাইরাস ছিল। এবছরও তার দাপট কমেনি। নতুন দুই রূপে তার পৃথিবীতে আগমন। ডেল্টা এবং ওমিক্রন, এই দুই ভ্যারিয়ান্টকে নিয়ে এবছরের শুরু থেকে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ একইভাবে আতঙ্কিত। যে দু’টি টীকা গতবছর থেকেই কোভিডের প্রতিষধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল সেই ফাইজার এবং মডের্নায় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ থামানো যায়নি। একইভাবে ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণও বিশ্বজুড়ে ক্রমশ বাড়ছে। উপযুক্ত টীকা কিন্তু এখনও আসেনি।
পারসেভারেন্স রোভারের মঙ্গলে পা রাখাঃ
এবছরের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলে পা রেখে ইতিহাস গড়ল নাসার পারসেভারেন্স রোভার উপগ্রহ। বস্তুত এই উপগ্রহই প্রথম যে মঙ্গলপৃষ্ঠে পা রাখল। মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে ইতিমধ্যে রোভার ওখানকার পাথর পাঠিয়েছে। এছাড়া, মঙ্গলের আবহাওয়ায় অক্সিজেনের পরিমাণ বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কতটা রয়েছে তার নমুনাও রোভার পাঠিয়েছে নাসাকে। মঙ্গল অণ্বেষণের কাজ নাসার হাতেই শুরু হয়েছে।
ড্রাগন ম্যানের খোঁজঃ
৯০ বছর আগে চিনের একটি বহুতল নির্মাণকার্য চলার সময় এক চাষি পেয়েছিলেন একটি মানুষের মাথার খুলির জীবাশ্ম। ২০১৮ সালে সেই খুলি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে দেওয়া হয়। তারপর বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আবিষ্কার হয়েছে ‘হোমো লঙ্গি’ বা ড্রাগন ম্যান সম্প্রদায়ের মানুষের কথা। প্লেস্টোসিন যুগের শেষদিকে যে মানব সম্প্রদায় পৃথিবীতে বিরাজ করেছিল। আদিম মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে এই সম্প্রদায়ের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রেট ব্যারিয়ার রিফঃ
পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রতিফলনে বিশ্ব জুড়ে এবছর দেখা গিয়েছে নানারকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অরণ্যে দাবানল, খরা, তাপপ্রবাহ, হিমবাহ থেকে দ্রুত বরফের গলে যাওয়া এবং সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, শীতের জায়গায় অপ্রত্যাশিতভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে অতিবৃষ্টি হওয়া এবং বন্যার প্রকোপ। তবে এর মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে তীব্র প্রতিফলন অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ১৪ শতাংশ প্রবাল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মহাকাশে পর্যটনঃ
এলন মাস্ক, জেফ বেজোস, রিচার্ড ব্র্যানসনের মত ধনকুবেররা মহাকাশে পর্যটন, মহাকাশে বাণিজ্য, এমনকী, মঙ্গল, বৃহস্পতির মত গ্রহকে সাধারণ মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। এই ধনকুবেরদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারি ও সাধারণ মানুষের মহাকাশ ভ্রমণ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ধনকুবেররা এখন মহাকাশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
আদিমতম মানুষের পায়ের ছাপঃ
নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে প্রত্নতত্ববিদদের আদিমতম মানুষের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া এবছরের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পায়ের ছাপগুলোর বয়স তারা জানিয়েছেন ২১ থেকে ২৩ হাজার বছর আগের। তারপরই বলা হচ্ছে বরফের যুগেও মানুষ ছিল।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশে রওনা হলঃ
নাসার অত্যাধুনিক, আগের হাবলের চেয়েও অনেক শক্তিশালী টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব রওনা দিল মহাকাশের উদ্দেশ্যে। ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে তৈরি হওয়া এই টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে এই টেলিস্কোপ। নাসাকে জানাবে সৌরজগৎ সম্পর্কে পুঙ্খ্যানুপুঙ্খ তথ্য।