২১০০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও বায়ু দূষণ বার্ষিক প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে

২১০০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও বায়ু দূষণ বার্ষিক প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আমরা এখন উষ্ণযুগের মধ্য দিয়ে চলেছি, ক্রমে ক্রমে পৃথিবী আরও গরম হবে। জলবায়ুর অবক্ষয় কিন্তু তাতে আরও ইন্ধন দিয়ে চলেছে। উষ্ণায়নের বিপদ কমবে না, বরং বাড়বে। তাপের এই তীব্রতা আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে, তা প্রায় নিশ্চিত। আবার অন্যদিকে যে বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি, দূষণের কারণে সেই বাতাসই এখন নিঃশব্দে ঘাতকে পরিণত হয়েছে। এমন কথাই জানিয়েছে সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা। সেখানে বলা হয়েছে তাপমাত্রার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং দূষণজনিত কারণে মৃত্যুহার বাড়ছে। বায়ু দূষণ এবং চরম তাপমাত্রার কারণে মৃত্যুহার একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়, এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কেমিস্ট্রির নেতৃত্বে এক নতুন গবেষণায়, একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দল দেখেছেন সম্ভাব্য অনুমান অনুসারে, বায়ু দূষণ এবং চরম তাপমাত্রার কারণে বার্ষিক মৃত্যুর হার শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৩০ মিলিয়নে পৌঁছে যেতে পারে। উন্নত সংখ্যাগত সিমুলেশনের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা, একটি উদ্বেগজনক প্রবণতার কথা বলেছেন- দূষণজনিত কারণে মৃত্যু পাঁচগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, কিন্তু তাপমাত্রা-সম্পর্কিত মৃত্যুহার সাত গুণ বাড়তে পারে। অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ২০%-এর জন্য বায়ু দূষণের চেয়ে আরও গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে চরম তাপমাত্রা। গবেষকরা ২০০০ থেকে ২০৯০ সাল পর্যন্ত তাদের গণনার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনুমান করে দশ বছরের ব্যবধানে বিশ্লেষণ করেছেন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কেমিস্ট্রির গবেষক ডাক্তার আন্দ্রেয়া পোজার ব্যাখ্যা করে বলেন ২০০০ সালে, চরম তাপমাত্রা অর্থাৎ অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং তাপ উভয়ের কারণেই প্রায় ১.৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। শতাব্দীর শেষ নাগাদ, সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে, এই সংখ্যা ১০.৮ মিলিয়নে বৃদ্ধি পেতে পারে, প্রায় সাত গুণ বেশি। ২০০০ সালে দূষণের কারণে বার্ষিক মৃত্যু ছিল প্রায় ৪.১ মিলিয়ন যা অনুমান করা হচ্ছে শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১৯.৫ মিলিয়নে বৃদ্ধি পেতে পারে যা প্রায় পাঁচগুণ বেশি। গবেষণায় আঞ্চল ভিত্তিতে ভবিষ্যতের মৃত্যুর হারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের কথাও বলেছে। মনে করা হচ্ছে দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ায় মৃত্যু হার বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে কারণ একদিকে যেমন প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনই বায়ু দূষণের মাত্রাও বেশি। বিপরীতে, উচ্চ-আয়ের অঞ্চল যেমন পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিকে, বায়ু দূষণের তুলনায় চরম তাপমাত্রার কারণে মৃত্যু বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে কিছু দেশ, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডে ইতিমধ্যেই এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে বায়ু দূষণের তুলনায় চরম তাপমাত্রা আরও উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে এবং এই বৈষম্য বাড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন শুধুমাত্র একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকির কারণ। সাইপ্রাস ইনস্টিটিউটের ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক জিন শিয়ারের মতে ভবিষ্যতে আরও মৃত্যু রোধ করতে এখনই প্রশমন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এমন কথাই উঠে আসছে এই গবেষণায়।