৪৪ বছরের ধাঁধার সমাধান

৪৪ বছরের ধাঁধার সমাধান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ অক্টোবর, ২০২১

১৯৭৭ সালে দক্ষিণ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ব্যারেন পার্বত্য অঞ্চল থেকে পাওয়া ‘ট্রেস ফসিল’ নিয়ে ধাঁধায় পড়েছিলেন জীবাশ্মবিদরা। মুশকিলের বিষয় হয়েছিলো যে কোয়ার্টাজাইট শিলার মধ্যে ফসিল পাওয়া যায় সেই পাথর কঠিনীভূত হয়েছে জীব সৃষ্টির অনেক আগে। প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে ঐ শিলা কঠিনীভূত হয়েছিল – জানান ভূতাত্ত্বিকরা। তাহলে ফসিল তৈরি হলো কিভাবে?
এখানে উল্লেখ্য ট্রেস ফসিল কিন্তু সাধারণ জীবাশ্মের চেয়ে আলাদা। প্রাণী বা জীবের সমগ্র দেহাংশ চাপা পড়ে ট্রেস ফসিল তৈরি হয় না। বরং তা নয় দেহের অবশিষ্টাংশ দিয়ে, যেমন – পায়ের ছাপ। আবার যেসব প্রাণীরা গর্তের ভেতর থাকে, তারা ভূমিতে গর্ত খুঁড়ে সাময়িক আবাসস্থল করলে এবং সেই গর্ত যদি কঠিন শিলা দ্বারা আবদ্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ঐ গর্ত ট্রেস ফসিল হিসেবে বিবেচিত হয়। আসলে ঐ গর্ত কে বলা হয় ‘বরো ফসিল’। বরো ফসিল থেকে বসবাসকারী জীবের আচার-ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
গত ৪৪ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন হয়তো জীববিজ্ঞানের জানাবোঝার অনেক আগে ঐ প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছিলো। অথবা এমন কোনো প্রাণী জন্মেছিল, জীববিজ্ঞানের হয়তো জানা নেই, তাদের দাঁত কঠিন শীলাকেও চূর্ণ করতে পারতো। বলাই বাহুল্য এই উত্তর গুলি খুবই গোলমেলে ধারণাযুক্ত। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ব্রুস রেনেগার জানান, কোয়ার্টজাইট শিলা এতই কঠিন তা খোঁড়া কোনো প্রাণীর দাঁত দিয়ে সম্ভব নয়। সম্প্রতি PNAS পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ থেকে এতদিনের ধাঁধার সমাধান মিলেছে।
নতুন গবেষণা জানাচ্ছে ওই গর্ত বা বরো ফসিল আসলে শিলা সৃষ্টির অনেক পরে তৈরি। ঐ বরো ফসিলের বয়স মাত্র ৪ কোটি বছর। শিলার বয়সের (৬০কোটি) তুলনায় অনেক নবীন। তাহলে কঠিন শিলার মধ্যে ঐ গর্ত সৃষ্টি হলো কেমন করে?
এই প্রশ্নটি আসলে ভূতত্বের। জীবাশ্মবিদ্যার চেনা রাস্থায় এর সমাধান মেলেনি।
প্রথমত, অত্যাধুনিক ইলেকট্রন আনবিক্ষনিক যন্ত্রের সাহায্যে স্ক্যান করে গবেষকরা বরো ফসিলেরর সময়কাল নির্নয় করেন (ইয়েসিন যুগের)। পরবর্তী অনুসন্ধানে দেখা যায় শিলায় ওপরের স্তরেই প্রথম বিচ্যুতি এসেছিল। আসলে ইয়েসিন যুগেই (৪কোটি বছর আগে) ক্রান্তীয় অঞ্চলের আদ্র আবহাওয়া ও প্লাবনের ফলেই শিলা চ্যুত হয়। এবং প্রাণীরা ঐ সাময়িক আবাসস্থল বা গর্ত তৈরিতে সক্ষম হয়। পরে শিলা আবার কঠিনীভূত হয়ে যায়। ফলে শিলার ভেতরে বরো ফসিল সৃষ্টি হয়। একই ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার উদাহরণ অন্যত্রও আছে। যেমন, ভেনেজুয়েলার কোয়ার্টজাইট গুহা। গবেষক দলের ধারণা ঐ ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার কারণেই অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণের মহাসাগরের আয়তনও বৃদ্ধি পেয়েছে ঐ সময়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + three =