৫৩টি নতুন প্রকাণ্ড কোয়াসার

৫৩টি নতুন প্রকাণ্ড কোয়াসার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গের চার জ্যোতির্বিজ্ঞানীর একটি দল সম্প্রতি ৫৩টি নতুন বিরল ‘জায়ান্ট রেডিও কোয়াসার’ আবিষ্কার করেছেন। এগুলো আকারে আকাশগঙ্গা বা ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের থেকেও প্রায় ২০-৫০ গুণ বড়। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, মেদিনীপুর সিটি কলেজের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. সব্যসাচী পাল। তাঁর নেতৃত্বে ড. সৌভিক মানিক (মেদিনীপুর সিটি কলেজ), ড. নিতাই ভুক্তা এবং ড. সুশান্ত মণ্ডল (সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়) একসঙ্গে TIFR GMRT Sky Survey (TGSS)-এর ১৫০ MHz তথ্য বিশ্লেষণ করে, মোট ৩৬৯টি রেডিও কোয়াসার চিহ্নিত করেন। তার মধ্যে ৫৩টি নিশ্চিতভাবে ‘জায়ান্ট রেডিও কোয়াসার’ হিসাবে শনাক্ত হয়। গবেষণায় ব্যবহৃত ‘জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ’টি (GMRT) কম কম্পাঙ্ক, বিশাল আকাশ অঞ্চল কভারেজ এবং উচ্চ সংবেদনশীলতা যুক্ত। তাই এই ধরনের বিশাল রেডিও কাঠামো শনাক্ত করার কাজে বিশেষ উপযোগী।

কোয়াসার হল দূরবর্তী গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত ‘বিপুলভর ব্ল্যাক হোল’। এর ভর সূর্যের ভরের দশ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন গুণ। অধিকাংশ কোয়াসার দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গে উজ্জ্বল হলেও, খুব অল্পসংখ্যক কোয়াসার শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গও নির্গত করতে পারে। আরও বিরল সেই উপশ্রেণি, যেখানে রেডিও বিকিরণের জেট ছড়ায় লাখ লাখ আলোকবর্ষ জুড়ে। সেগুলোকেই বলা হয় জায়ান্ট রেডিও কোয়াসার।

ড. সৌভিক মানিক সহজ ভাষায় বলেন, “এমন জেটের আকার আমাদের সৌরজগৎ বা গ্যালাক্সির সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটা ২০ থেকে ৫০টি মিল্কিওয়ে ছায়াপথ পাশাপাশি রাখার মতো।”

এই কোয়াসারগুলোতে, ব্ল্যাক হোলের চারপাশে গ্যাস ও ধূলিকণা জমে, ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ তৈরি করে। ডিস্কের গভীরে চরম তাপ, আয়নায়ন এবং চৌম্বক বল, উচ্চ-শক্তির প্লাজমাকে আলোর গতির কাছাকাছি বেগে দুটি বিপরীতমুখী রেডিও জেট হিসেবে মহাকাশে নিক্ষেপ করে। সময়ের সঙ্গে এসব জেট বিশাল ‘রেডিও লোব’ তৈরি করে, যা গ্যালাক্সির সীমা ছাড়িয়ে মিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত হয়। ড. পাল মন্তব্য করেন, “এই বিরল কোয়াসারগুলির রেডিও জেট আমাদের ব্ল্যাক হোলের বিবর্তন, আন্তঃগ্যালাক্টিক গ্যাস এবং মহাবিশ্বের বড় স্কেলের পরিবেশ বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।” গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়াসার জেটগুলো সবসময় সমান হয় না। অনেকক্ষেত্রে এক পাশ অন্য পাশের তুলনায় বড় বা উজ্জ্বল। ড. নিতাই ভুক্তা ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটা প্রমাণ করে যে জেটগুলো সমান পরিবেশে ছড়ায় না। ঘন গ্যাসে ধাক্কা খেলে জেটের গতি কমে যায়, আর তুলনামূলক ফাঁকা অঞ্চলে তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।“ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হল, অধিক লাল অপসারণ যুক্ত কোয়াসার বেশি অসম জেট প্রদর্শন করে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মহাবিশ্ব ছিল অধিক বিশৃঙ্খল ও ঘন। পরবর্তী পর্যায়ে দলটি উন্নততর GMRT, Very Large Array (VLA) এবং অপটিক্যাল/ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোস্কপি ব্যবহার করে আরও সুনির্দিষ্ট দূরত্ব, জেট শক্তি এবং পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ করছে। এছাড়া এক্স রশ্মি পর্যবেক্ষণ দিয়ে ব্ল্যাক হোলের আশেপাশের উত্তপ্ত গ্যাস বিশ্লেষণ করা হবে। ড. পাল বলেন, “এই আবিষ্কার শুধু যে কোয়াসারের সংখ্যা বাড়াল তার নয়, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেও গভীরতর করল। এটি ব্ল্যাক হোল তত্ত্ব এবং আধুনিক কসমোলজিক্যাল মডেলকে আরও শক্তিশালী করে।

এই আবিষ্কার পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের গবেষণাকে আবারও বিশ্বের নজরে আনল।

 

সূত্র: Indian Team Discovers 53 Giant Radio Quasars, Some 50 Times Bigger Than the Milky Way by Tuhin Sajjad SK; 28th Nov 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 14 =