৬০ লক্ষ বছর প্রাচীন বানরজাতীয় প্রাণীর কানের গঠন হাঁটার বিবর্তন প্রকাশ করল

৬০ লক্ষ বছর প্রাচীন বানরজাতীয় প্রাণীর কানের গঠন হাঁটার বিবর্তন প্রকাশ করল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

একধরনের প্রাচীন বানর প্রজাতির অভ্যন্তরীণ কানের ওপর গবেষণা জানাচ্ছে যে হাঁটার ক্ষেত্রে মানুষের যে বিবর্তন ঘটেছে, অর্থাৎ দু পায়ে ভর দিয়ে হাঁটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এটা তিন ভাগে বিভক্ত প্রক্রিয়া, গাছে গাছে দোল খাওয়া থেকে মাঝে মিশ্র ধরনের হাঁটা শেষে শক্ত মাটিতে দাঁড়ানো। এই নতুন প্রমাণ লুফেংপিথেকাসের মাথার খুলি থেকে পাওয়া যায়। লুফেংপিথেকাস, একধরনের বানর প্রজাতি যাদের প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে পূর্ব এশিয়ায় দেখা যেত। লুফেংপিথেকাসের দাঁতের কিছু বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায়, এরা আধুনিক কালের ওরাংওটাঙদের আদিম পূর্বপুরুষ, যারা গাছের ডালে ডালে ঘোরাফেরা করে। এই বানর প্রজাতির মাথার খুলি বিশ্লেষণ করে, এদের আফ্রিকান বনমানুষ যেমন গরিলা এবং শিম্পাঞ্জির কাছাকাছি শ্রেণিতে রাখা যায়, যারা হাঁটতে সক্ষম।
১৯৯৪ সাল থেকে মানুষ এবং আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষরা কীভাবে হাঁটাচলা করত তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা কানের ভেস্টিবুলার সিস্টেম নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। ভিতরের কানের ভেস্টিবুলার সিস্টেম, তার তিনটি লুপিং অর্ধবৃত্তাকার ক্যানালে প্রাণীর অবস্থান এবং গতি সম্পর্কে মস্তিষ্কে তথ্য পাঠায়। ক্যানালগুলো তরল এবং সূক্ষ্ম চুলে ভরা যা নড়াচড়া অনুভব করে, ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস -এর প্যালিওঅন্টোলজির গবেষক ঝাং এবং তার সহকর্মীরা ১৯৭০-৮০ এর দশকে দক্ষিণ চীনে খনন করা তিনটে লুফেংপিথেকাস জীবাশ্ম ডিজিটালভাবে স্ক্যান করেছিলেন, যেখানে খুলির অন্যান্য অংশগুলো চূর্ণ হয়ে গেলেও ভিতরের কানের ল্যাবাইরিন্থগুলো সংরক্ষিত ছিল। অভ্যন্তরীণ কানের ল্যাবাইরিন্থের এক প্রান্তে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার ক্যানাল, অন্য প্রান্তে সর্পিল-আকৃতির কক্লিয়া এবং মাঝখানে কেন্দ্রীয় ভেস্টিবুল রয়েছে। আধুনিক ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে, জীবাশ্মের খুলির অভ্যন্তরীণ কাঠামো ইমেজিং করা গেছে যাতে বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কীভাবে হাঁটাচলা করত তা প্রকাশ পেয়েছে। লুফেংপিথেকাসের অভ্যন্তরীণ কানের আকার এবং আকৃতি বিলুপ্ত এবং জীবিত বনমানুষ, মানুষ এবং অস্ট্রালোপিথেকাসের মতো প্রাথমিক মানব পূর্বপুরুষদের সাথে তুলনা করে, গবেষকরা মানব পূর্বপুরুষরা কীভাবে হাঁটতে শুরু করেছিল তার একটি পরিষ্কার চিত্র পেয়েছেন।
আজকের দিনের গিবনের মতো প্রাচীন বানরজাতীয় প্রাণীরা তাদের হাতের সাহায্যে গাছে গাছে চলাফেরা করত । এরপর আসে লুফেংপিথেকাস, যারা গাছে গাছে বাইত, দোল খেত আবার মাটিতে চারপায়ে হাঁটত, এমনকি যখন গাছের ডাল ধরে থাকত, তখন দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াত। গবেষকদের মতে লুফেংপিথেকাস বনমানুষ এবং মানুষের প্রাচীন সাধারণ পূর্বপুরুষদের মতো সাদৃশ্যপূর্ণভাবে ঘোরাফেরা করত আর তাদের এই মিশ্র হাঁটাচলা থেকে দুপায়ে ভর দিয়ে হাঁটা বর্তমান মানুষের বিবর্তন ঘটেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 5 =