৬৮ বছর ধরে যিনি টানা হেঁচকি তুলে গিয়েছিলেন

৬৮ বছর ধরে যিনি টানা হেঁচকি তুলে গিয়েছিলেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুলাই, ২০২৩

মাঝে মাঝে আমাদের হেঁচকি ওঠার জন্য অস্বস্তি হয় কিন্তু তা স্বল্প কিছু সময়ের জন্য, ধরুন যদি কয়েকদিন ধরে হেঁচকি উঠতে থাকে, কেমন লাগবে? তাহলে শুনুন, চার্লস ওসবোর্ন নামে একজন ব্যক্তির কথা, যিনি ৬৮ বছর ধরে এ নিয়ে সামাজিক অসুবিধা ভোগ করেছেন।
১৩ই জুন, ১৯২২, তরুণ ওসবোর্ন নেব্রাস্কার খামারে একটা শূকর নিয়ে কাজ করার সময় হেঁচকি তোলা শুরু করেন, যে হেঁচকি থামে ১৯৯০ সালে।
হেঁচকি কেন ওঠে? মনে করা হয় হেঁচকি একটি নিউরাল পথ দিয়ে শুরু হয়, যাকে রিফ্লেক্স আর্ক বলে। শারীরিকভাবে শ্বাসযন্ত্রের পেশীগুলির অনিচ্ছাকৃত সংকোচন হয়, আর ভোকাল কর্ডের মধ্যে গ্লটিস – হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যাতে ‘হিক’ শব্দ তৈরি হয়। এই অনিচ্ছাকৃত সংকোচনের ফলে যে হেঁচকি ওঠা শুরু হয় তার জন্য কিছু কারণ থাকে, যেমন অতিরিক্ত মদ্যপান, অনেকটা বেশি খাওয়া বা চিবানোর সময় অনেকটা হাওয়া ভিতরে ঢুকে যাওয়া, ওষুধের প্রভাবে, উত্তেজনা বাড়লে এমনকি হাসির জন্যও হতে পারে। ভ্রূণেও হেঁচকি ওঠে, মনে করা হয় নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য তখন পেশিগুলো প্রস্তুত হতে থাকে।

হেঁচকির ডাক্তারি পরিভাষা হল সিঙ্গল্টাস, যা ল্যাটিন শব্দ সিঙ্গল্ট থেকে এসেছে, এর অর্থ কান্নার সময় শ্বাস নেওয়া, এবং সত্যিই হেঁচকি তোলার সময় নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য এই নামটা বেশ উপযুক্ত।

বলা হয় জল পান করলে, নিঃশ্বাস চেপে ধরে রাখলে, কাগজের ব্যাগের মধ্যে নিঃশ্বাস নিলে, আকুপাংচার, সম্মোহনে হেঁচকি ওঠা কমতে পারে। তবে এগুলো কমানোর কোনো বিজ্ঞনসম্মত পদ্ধতি নয়। নিউরোলজিস্টদের তৈরি হিক – অ্যাওয়ে নামে স্ট্র হেঁচকি কমানোর উপযোগী। ৯০ শতাংশ ব্যক্তি বলেছেন হিক – অ্যাওয়ে বেশ কার্যকরী, তবে এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

তবে সাময়িক হেঁচকি, কোনো উদ্বেগের কিছু না হলেও, দীর্ঘদিন ধরে অবিরামভাবে এটা চলতে থাকলে, তা কোনো রোগের সূত্রপাত হতেও পারে; যেমন কেন্দ্রীয় স্নায়ুকোশের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, স্ট্রোক প্রভৃতি। এটা চলতে থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। দেখা গেছে অবিরাম হেঁচকি যাদের ওঠে, তাদের ৮০ শতাংশের গ্রাসনালীতে সমস্যা থাকে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রোগ আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একজন ব্যক্তির তিন সপ্তাহ হেঁচকি ওঠার পর বোঝা গিয়েছিল তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, একই ঘটনা চারদিন ধরে হেঁচকি ওঠা আর এক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল।

বেচারা ওসবোর্ন -এর ক্ষেত্রে কোনো কিছুই কাজ করেনি, তিনি এমনভাবে নিজেই শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি বার করেছিলেন, যাতে হিক শব্দটা একটু কমে। যাইহোক ১৯৯০ সালে হঠাৎ তার হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যায় তারপর সুস্থ শরীরে তিনি আরো এক বছর বেঁচেছিলেন। তিনি সারাজীবনে মোটামুটি ৪৩০ মিলিয়ন হেঁচকি তুলেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 17 =