আতঙ্কের এক নাম, ফোরাসরাহসিড পাখি

আতঙ্কের এক নাম, ফোরাসরাহসিড পাখি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ নভেম্বর, ২০২৪

মানুষের সৌভাগ্য বিবর্তন হয়ে পৃথিবীতে আসার আগেই বেশ কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে একটা হল ফোরাসরাহসিড নামে এক ভয়ঙ্কর পাখি। শুধুমাত্র একটা পাঁজরার হাড় থেকে এই মাংশাসী পাখির কথা জানা গেছে। প্রায় ১কোটি ২০ লাখ বছর আগে কলম্বিয়ার টাটাকোয়া মরুভূমিতে এরা রাজত্ব করত। এদের সঙ্গে দেখা পাওয়া যেত গাড়ির আকারের আরমাডিলো শ্রেণির প্রাণী, দৈত্যাকার স্লথ এবং স্যাবার-দাঁতযুক্ত মার্সুপিয়াল প্রাণী। হাড়ের নমুনা থেকে বোঝা যায়, এই পাখি, নিজের গোত্রের পাখিদের তুলনায় অনেক বড়ো ছিল, এদের উচ্চতা ৩ থেকে ৯ ফুট অবধি হত বলে অনুমান করা হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর শিকারী পাখির মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তাও অনুমান করা গেছে। এর শরীরে, এর চেয়েও আরও ভয়ঙ্কর জন্তুর চোয়ালের দাগ থেকে বোঝা গেছে, যার কামড়েই এই পাখির মৃত্যু ঘটেছিল।
আর্জেন্টিনার সেন্টার ফর রিসার্চ ইন আর্থ সায়েন্সেস থেকে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী ফেদেরিকো ডিগ্রেঞ্জ ও তার সহকর্মীরা দেখেন যে এই পাখির পাঁজরায় বর্তমান কুমিরের প্রাচীন আত্মীয়, পুরুসাউরাসের দাঁতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অনুমান করা হচ্ছে ৩০ ফুট লম্বা এক প্রাচীন কুমিরের দাঁতে এই পাখির হাড় ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। এই কুমিরের আক্রমণে এই ভয়ঙ্কর পাখির মৃত্যু হয়। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির জীবাশ্মবিদ সিওবান কুকের বর্ণনা অনুসরণে ফোরাসরাহসিডের বৃহদাকার চঞ্চুর জন্য তাদের মাথা অত্যন্ত ভারী হত। এদের মাথার খুলির শারীরবৃত্তীয় প্রমাণ অনুসারে এই পাখি অত্যন্ত দক্ষ শিকারী ছিল। এরা মাটিতে বাস করত, দৌড়ানোর জন্য তাদের বেশ শক্তিশালী পা ছিল, এরা অন্যান্য প্রাণী খেত। এদের জীবাশ্ম থেকে মনে হয় এরা শীর্ষ খাদক ছিল, তাই যাদের এরা খেত, সেই প্রাণীদের তুলনায় এদের সংখ্যা কম ছিল। এদের উৎপত্তিস্থল ছিল দক্ষিণ আমেরিকা। বর্তমানে ফোরাসরাহসিডের সবচেয়ে কাছের জীবিত আত্মীয়রা এই বিশাল উড়ন্ত আতঙ্কের প্রায় বিপরীত, এরা হল লাল পায়ের সেরিমা (কারিমা ক্রিস্টাটা) এর মতো হালকা, লম্বা-পা, লম্বা গলার, দক্ষিণ আমেরিকার এক সুন্দর পাখি। গবেষণাটি পেপারস ইন প্যালিওঅন্টোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।