ফুল নকল মাছির মতো আকার বানিয়ে তাদের কীভাবে বোকা বানায়

ফুল নকল মাছির মতো আকার বানিয়ে তাদের কীভাবে বোকা বানায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌।
Posted on ৩১ মার্চ, ২০২৩

ফুল কীভাবে পোকামাকড়ের যৌন অনুকরণ করে তাদের মধু খাওয়ার জন্য আকৃষ্ট করে, যার ফলে পরাগমিলন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর যাবত গবেষণা করেছেন। ফুল শুধুমাত্র একটা DNA – এর সাহায্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে পোকা মাকড়কে বিস্ময়করভাবে আকর্ষণ করে।
বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আফ্রিকার ডেইজি গোর্টেরিয়া ডিফুসা- কে লক্ষ করে দেখেন, এই ফুলের যৌন অনুকরণ বিবর্তনের ইতিহাসে বেশ সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে এবং এই প্রজাতির সমস্ত ফুলের ক্ষেত্রে এই যৌন অনুকরণ একইরকম হয়না। এই ডেইজি ফুলগুলোর পাপড়ি হালকা হলুদ থেকে উজ্জ্বল লালচে কমলা রঙয়ের হয়, কোনো কোনো ফুলে ছোপছোপ দাগ দেখা যায় যা ফুলের কেন্দ্র ঘিরে অবস্থান করে।
এই ফুলগুলোর চেহারা নানাভাবে পরিবর্তিত হয়, এবং কিছু কিছু ফুলে রঙের দাগগুলো সবুজ-কালো উঁচু উঁচু অংশে রূপান্তরিত হয়, যা দেখতে ঠিক মেয়ে মাছির মতো, যেন মেয়ে মাছি পুরুষ সঙ্গীর জন্য পাপড়ির উপর প্রলোভনশীলভাবে অপেক্ষা করছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রোমান কেলেনবার্গারের নেতৃত্বে এক নতুন গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে, কীভাবে জিনের তিনটে সেট, যার একসময় মাছিদের আকর্ষণ করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না, তা কীভাবে ফুলের পরাগমিলনের কৌশলের অংশ হয়ে উঠেছে। এই গবেষণা কারেন্ট বায়োলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানী এবং সিনিয়র লেখক বেভারলি গ্লোভার বলেছেন, এই ডেইজি কোনো নতুন জিন তৈরি করেনি, যা মাছির মতো দেখতে আকৃতি তৈরি করতে পারে । এটা উপস্থিত বিভিন্ন জিন যারা গাছের নানা অংশে বিভিন্ন কাজ করে তাদের একত্রিত করে, পাপড়িতে এমন দাগ তৈরি করে যা পুরুষ মাছিদের প্রলুব্ধ করে।

এর ফলে রঙ্গকগুলির সংমিশ্রণে (ক্যারোটিনয়েড – হলুদ-কমলা রঙ এবং অ্যান্থোসায়ানিন – গাঢ় বেগুনি-নীল) একটা নীল-সবুজ কালো আভা বিশিষ্ট রঙ তৈরি হয়, যা মাছির গায়ের খোলসের সাথে সদৃশ।

কেলেনবার্গার বলেছেন, পুরুষ মাছিগুলো সাধারণ দাগবিশিষ্ট ফুলের ওপর বেশিক্ষণ বসে না, কিন্তু মেয়ে মাছির মতো দেখতে ফুলের ওপর তারা অনেকক্ষণ বসে আর যৌন মিলনের চেষ্টা করতে থাকে ফলে ফুল থেকে তাদের গায়ে অনেক পরাগ রেণু লেগে যায় যা ফুলের পরাগমিলনের সহায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =