অবসাদের পিছনে এনজাইমের ভূমিকা আছেঃ গবেষকদের দাবী

অবসাদের পিছনে এনজাইমের ভূমিকা আছেঃ গবেষকদের দাবী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৯ এপ্রিল, ২০২৩

আমাদের মোটামুটি ধারণা হল, আমাদের হরমোন স্তর, অন্ত্র ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে একটা জটিল সম্পর্ক আছে, যদিও সেই সম্পর্ক নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটা এনজাইম এই তিনটের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং এই এনজাইমের উপস্থিতির জন্য প্রজননক্ষম মহিলাদের মধ্যে অবসাদ দেখা যায়।
‘সেল মেটাবলিজম’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে; উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে গবেষণারত ডি লি এবং সহকর্মীরা ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৯১ জন অবসাদগ্রস্থ মহিলার রক্তের সিরামের সাথে এমন ৯৮ জন মহিলার রক্তের সিরামের মধ্যে তুলনা করেছেন, যাদের মধ্যে কোনরকম মানসিক অবসাদ নেই। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে, যে সমস্ত মহিলার মধ্যে হতাশা আছে তাদের সিরামে এস্ট্রাডিওলের মাত্রা প্রায় অর্ধেক ছিল। এস্ট্রাডিওল হল ইস্ট্রোজেনের প্রাথমিক রূপ, যা প্রজননক্ষম মহিলাদের শরীরে পাওয়া যায়। পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক মহিলা কেন অবসাদে আক্রান্ত হন তা অবসাদ ও এস্ট্রাডিওলের সম্পর্ক থেকে বোঝা যায়।
বিজ্ঞানীদের প্রায় ১০০ বছর আগে থেকেই ধারণা ছিল, এস্ট্রাডিওলের সঙ্গে প্রজননক্ষম মহিলাদের অবসাদের সম্পর্ক আছে। রজোঃবন্ধ হওয়ার পর বা অন্তসত্ত্বাকালীন সময়ে এস্ট্রাডিওলের মাত্রা কমে যায় এবং মহিলাদের মানসিক অবসাদ জাগে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ডিম্বাশয় থেকে অতিরিক্ত যৌন হরমোন অ্যান্ড্রোজেন ক্ষরিত হয় ফলে যৌন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া – র ক্ষেত্রে জন্মের সময় থেকে কিছু জেনেটিক অসংগতি দেখা যায়, শরীরে একটা এনজাইম কম থাকার জন্য নির্দিষ্ট কিছু হরমোন – কর্টিসল, অ্যান্ডোস্টেরন, টেস্টোস্টেরন তৈরি হয় না। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম ও কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া, এই রোগ দুটির ক্ষেত্রে এস্ট্রাডিওলের মাত্রা কমে যায় ও অবসাদের সৃষ্টি হয়।
এস্ট্রাডিওল ডিম্বাশয়ে উৎপাদিত হয়, নানা শারীরিক কাজ যেমন মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে, এরপর যকৃতে এস্ট্রাডিওলের বিপাক হয়, সেখান থেকে তা অন্ত্রে চলে যায়। অন্ত্রে এই হরমোন কিছুটা রক্তে শোষিত হয়, যাতে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। অন্ত্রে উপস্থিত একটা অনুজীবী এই হরমোন ভাঙতে সাহায্য করে।
এই অনুজীবীকে চিহ্নিত করার জন্য লি ও তার সহকর্মীরা অবসাদগ্রস্থ মহিলাদের শরীর উপস্থিত মাক্রোবায়োমের নমুনা যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস আগার প্লেটে রেখে তাদের খাদ্য হিসাবে শুধুমাত্র এস্ট্রাডিওল দেন। দুঘণ্টা পরে তারা দেখেন, ৬০% -র ওপর এস্ট্রাডিওল ভেঙে ইস্ট্রোনে পরিণত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন মসৃণ, ধূসর প্রান্তযুক্ত সাদা ঘন তরলের ছোট ফোঁটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাস স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে, তার জীবাণুটা চিহ্নিত করেছেন। এবং এই ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেনকে তারা ক্লেবসিলা অ্যারোজেনেস TS2020 নাম দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 14 =