মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর অক্ষাংশের বিচ্যুতির কারণ – জলসেচ

মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর অক্ষাংশের বিচ্যুতির কারণ – জলসেচ

বাছাই করা খবর- ২০২৩
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

জিয়োফিসিক্যাল রিসার্চ লেটারে ২৮- শে জুন প্রকাশিত হয়েছে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উত্তর মেরু কিছুটা সরে গেছে। কম্পিউটার প্রোগ্রামে, গাণিতিক মডেলের সাহায্যে দেখানো হয়েছে উত্তর মেরু ৭৮ সেমি হেলে পড়েছে। আর এর পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে জলসেচ। পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ, এবং এর সাথে ভৌত উত্তর মেরুর অবস্থান, টরন্টো এবং পানামা সিটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দ্রাঘিমাংশের একটি রেখা বরাবর কানাডার হাডসন উপসাগরের দিকে গত শতাব্দীতে বছরে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার গতিতে ভ্রমণ করছিল। এই আন্দোলনের কারণ ছিল পৃথিবীর ভরের পুনর্বণ্টন। শেষ বরফ যুগের অবসানের পর ভূত্বকটি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এটি গ্রিনউইচ মেরিডিয়ান বরাবর ৭৫-ডিগ্রি পূর্বমুখী স্থানান্তরিত হয়েছে।
গবেষণায় বহুকাল আগে থেকেই জানা গেছে, পৃথিবীর উত্তর মেরু কয়েক মিটার ব্যাস ব্যাপী আর্কটিক সমুদ্র অঞ্চল ঘিরে ঘুরে চলেছে। ঋতুচক্রের আবর্তন, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা পরিবর্তন, সমুদ্রে লবণের পরিমাণ পৃথিবীর যে উত্তর অক্ষাংশ ঘিরে ঘুরছে, তাকে প্রভাবিত করে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটায়। অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের জিওফিজিসিস্ট ক্লার্ক উইলসন বলেছেন, শুধুমাত্র এই শর্তগুলোই মেরুকে আস্তে আস্তে অন্যদিকে ঘোরাচ্ছে না। তিনি জানান বিশ্বব্যাপী হিমবাহ গলে যাওয়া এবং গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর থেকে সমুদ্রে আরো জল যুক্ত হয়ে এই মেরুর পূর্বদিকে প্রবাহ ঘটছে। তারা সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছেন, এর মধ্যে জলসেচের একটা বড়ো ভূমিকা দেখতে পেয়ে।
পূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জলসেচের ফলে, মাটির নীচ থেকে ২ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন জল উঠিয়ে আনার ফলে তা সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে, যাতে সমুদ্রের জলস্তর ৬ মিলিমিটারের বেশি বেড়ে গেছে। জলের ভার ও তার পরিমাণ প্রতি বছর মেরু অঞ্চলকে ৪ সেন্টিমিটার সরিয়ে দিচ্ছে। অন্যান্য প্রভাবকগুলোর প্রভাব কম বেশি পরিবর্তিত হতে থাকে, কিন্তু, জলসেচের ফলে সমুদ্রের জলস্ফীতি মেরু অঞ্চলের সরণে স্থায়ী প্রভাব ফেলছে, আর তা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে জলসেচের জন্য স্থানীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে প্রভাব পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়া সেন্ট্রাল ভ্যালির শীতলতা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে, পাশাপাশি কলোরাডো নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 2 =