প্রাকৃতিক সুরক্ষাকবচ ম্যানগ্রোভ মানুষের জন্য আজ বিপন্নতার পথে

প্রাকৃতিক সুরক্ষাকবচ ম্যানগ্রোভ মানুষের জন্য আজ বিপন্নতার পথে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৫ আগষ্ট, ২০২৩

প্রতি বছরের মতো এবছরও ২৬শে জুলাই ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হল। জাতিসংঘের মতে, এই অনন্য, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, বিপন্ন ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আর এদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্য প্রচারের জন্য এই দিনটি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ১০ টি ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে। এর মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন বৃহত্তম এবং ভারতের মোট ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস, সুনামি, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ক্ষয় থেকে রক্ষার জন্য প্রথম প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা। ২০২০ সালের মে মাসে, যখন সুপার সাইক্লোনিক ঝড় আম্ফান, ওড়িশা এবং বাংলার উপকূলে আঘাত হানে, তখন ম্যানগ্রোভ অরণ্য পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্যানে ধ্বংসের প্রভাব অনেক কম ছিল, কারণ সেখানে ম্যানগ্রোভ সফলভাবে উপকূল রক্ষা করেছিল এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমিয়েছিল।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, এটা মাছ, কাঁকড়া, ঝিনুক, সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং পাখির বাসা বাঁধার জন্য নার্সারি এবং পালনের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। ম্যানগ্রোভগুলি স্থানীয় অর্থনীতির সাথেও জড়িত, কারণ জেলেরা তাদের জীবিকার জন্য ম্যানগ্রোভের ওপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ম্যানগ্রোভের ভূমিকা ক্রমশ দুর্যোগ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য এক প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই অরণ্যের প্রচুর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে ম্যানগ্রোভ ক্রমবর্ধমান অস্তিত্ব বিপন্নতার মুখোমুখি। ম্যানগ্রোভের সবচেয়ে বড় বিপন্নতার কারণ হল উপকূলীয় উন্নয়ন, চিংড়ির জলজ চাষ, কাঠকয়লা চাষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
ইন্ডিয়া স্টেট অফ ফরেস্ট রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, সুন্দরবনের খুব ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্য দুই বর্গ কিলোমিটার সঙ্কুচিত হয়েছে। দ্য গ্লোবাল ম্যানগ্রোভ অ্যালায়েন্সের (জিএমএ) দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস ম্যানগ্রোভস ২০২২ রিপোর্ট অনুসারে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, মুম্বাই ৬০০ বর্গ কিমি ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে এবং সেই ক্ষতির ৬২% -এর বেশি ক্ষেত্রে সরাসরি মানুষ দায়ী। ২০০৫ ও ২০১৮ সালে মুম্বাই হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় অনুসারে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস করা যাবে না, এতে কোনো রকম নির্মাণ করা যাবেনা, এর রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু ২০২২ সালে হাইকোর্ট ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন (NHSRCL) কে মুম্বাই-আমেদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্পের জন্য মুম্বাই, পালঘর এবং থানে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২০০০০ ম্যানগ্রোভ কাটার অনুমতি দিয়েছে। তাই ২৬শে জুলাই ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম দিবস পালনের সার্থকতার জন্য সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।