পৃথিবীর প্রাচীনতম ইম্প্যাক্ট ক্রেটার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে

পৃথিবীর প্রাচীনতম ইম্প্যাক্ট ক্রেটার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২৩

সময়ের সাথে সাথে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর পৃষ্ঠে গ্রহাণুর আঘাতের প্রভাবে সৃষ্ট ক্রেটর বা গর্ত। একটি নতুন বিশ্লেষণ বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০ কোটি বছর আগের সৃষ্ট কোনো গর্ত খুঁজে পায় না। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছে যে পৃথিবী ক্রমাগত ক্ষয় হচ্ছে এবং নানান ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আর তাই সম্ভবত তার পৃষ্ঠ থেকে যে কোনো গর্তের চিহ্ন সম্পূর্ণরূপে মুছে যাচ্ছে। কেবলমাত্র উচ্চ-চাপের খনিজ এবং গলিত শিলার মতো কিছু চিহ্ন অবশিষ্ট রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্টার্ন কেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী ম্যাথিউ হুবার বলেছেন এই পুরানো গর্ত থাকলে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেত, অগত্যা যা পাওয়া যায় তার থেকেই ধারণা বা মতবাদ তৈরি করতে হবে।
সৌরজগত সৃষ্ট হওয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়ে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি অশান্ত ও উত্তাল ছিল। চারপাশে প্রচুর মহাকাশের শিলা উড়ন্ত আবস্থায় ছিল এবং সৌরজগতের অভ্যন্তরেও এর প্রভাব পড়েছিল। মঙ্গল, বুধ এবং চন্দ্র – এইসব গ্রহ বা উপগ্রহ ৪০০ কোটি বছর আগের খণ্ডিত পৃষ্ঠের এই প্রমাণ আজও বহন করে নিয়ে চলেছে। এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন যে পৃথিবী একইভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল, তবে ২০০ কোটি বছর আগে সৃষ্ট এই গর্তেগুলো পৃথিবী থেকে আজ মুছে গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন পৃথিবীতে এমন কিছু আছে যা মঙ্গল, বুধ এবং চাঁদের নেই। আর সম্ভবত তা হল– শক্তিশালী ক্ষয়জনিত প্রভাব এবং টেকটোনিক কার্যকলাপ। হুবার এবং তার দল জানতে আগ্রহী ছিল যে এই প্রক্রিয়াগুলোও সৃষ্ট ক্রেটার বা গর্তের প্রমাণ মুছে ফেলার ক্ষেত্রে ঠিক কতটা কার্যকর এবং দক্ষ।
তারা বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত ইমপ্যাক্ট ক্রেটারগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্রেডফোর্ট ক্রেটার নিয়ে গবেষণা করেন। এটি প্রায় ২০০ কোটি বছর পুরানো, এবং ৩০০ কিলোমিটার চওড়া। এই গর্তটি তৈরি হয় যখন একটি ২০ কিলোমিটার চওড়া গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানে। এর ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠের আকৃতির পরিবর্তন হয় এবং ঘাত প্রতিঘাতের ফলে কেন্দ্রে একটি শিখর গঠিত হয়। অনুমান করা হয় যে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে ভূত্বকের উল্লম্ব ক্ষয় সবচেয়ে বড়ো গর্তকে মুছে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ভ্রেডফোর্টে আনুমানিক ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার জুড়ে উল্লম্ব ক্ষয় হয়েছে। যা পড়ে রয়েছে তা হল পাহাড়ের একটি অর্ধবৃত্তাকার বলয়, এবং কিছু ছোটো ছোটো বৈশিষ্ট্য, সেই সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণ ম্যাপিং জরিপে পাওয়া ভূগর্ভে কিছু পরিবর্তন। তারা পাথরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন পরিবর্তন চিহ্নিত করেন এবং প্রভাবিত এবং অ-প্রভাবিত শিলার ঘনত্ব, জল ধরে রাখার ক্ষমতা, খনিজ পদার্থ্যের পরিমাণ ইত্যাদির তুলনা করেন। তারা দেখেন বড়ো বড়ো গর্তও ক্ষয় এবং অন্যান্য প্রভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =