সোলার ফার্ম থেকে বাদুড়রা দূরে থাকছে

সোলার ফার্ম থেকে বাদুড়রা দূরে থাকছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ আগষ্ট, ২০২৩

পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে পুনর্ব্যবহার যোগ্য শক্তি বা রিনিউএবেল এনার্জির প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপের প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎশক্তি বর্তমানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে আসে। ইউরোপের মাটিতে সোলার ফার্ম এক আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। ফটোভোলটাইক (PV) সোলার প্যানেলের একটি বৃহৎ সংগ্রহকে সোলার ফার্ম বলে। সেখানে সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, বিদ্যুতে রূপান্তর করা হয় এবং সেই বিদ্যুৎকে বিতরণ ও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই সোলার ফার্মের বিকাশের সাথে সাথে এগুলো কীভাবে জীববৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমরা আজও অন্ধকারে রয়েছি।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, যে সব স্থানে সোলার ফার্ম রয়েছে সেখানে বাদুড়ের ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পেয়েছে। বিষয়টি বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে কারণ বাদুড় হল রাতের পোকামাকড়ের শীর্ষ খাদক, কীটপতঙ্গ খেয়ে তারা পোকামাকড়ের সংখ্যাকে দমন করে তাই তাদের বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাদুড় আবার বাসস্থানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। একই চিত্র বায়ু কলেও দেখা যাচ্ছে। বায়ু কলের ব্লেডের সাথে সংঘর্ষে বহু বাদুড় মারা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একই কারণে অনুমানিক ৮৮৮,০০০ বাদুড় মারা যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে সৌর প্যানেলের ক্ষেত্রে কারণগুলো ভিন্ন হতে পারে। কীটপতঙ্গ যে উদ্ভিদ খায় সোলার ফার্মে তার প্রাপ্যতা কম থাকায় পোকামাকড়ের প্রাচুর্য কমতে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করছেন যে কন্ট্রোল সাইটের তুলনায় সোলার ফার্ম সাইটগুলোতে পোকামাকড়ের সংখ্যার পার্থক্য আছে কিনা।
মানুষের মতো বাদুড়ও দেখতে পায় কিন্তু তাদের শব্দ ব্যবহার করার একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি রয়েছে যার সাহায্যে তারা অন্ধকারে খাবার খুঁজে বের করতে সক্ষম, যাকে ইকোলোকেশন বলে। বাদুড় তাদের মুখ বা নাক দিয়ে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ স্পন্দন নির্গত করে এবং প্রতিধ্বনি শুনে তার অবস্থান বুঝতে পারে। সোলার ফার্মে প্যানেলগুলো বাদুড়ের ইকোলোকেশন কল প্রতিফলিত করতে পারে আর তার ফলে পোকামাকড় সনাক্তকরণকে আরও কঠিন করে তোলে। ফলত সেখানে বাদুড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সোলার ফার্মের সীমানা বরাবর স্থানীয় গাছ লাগালে সেখানে পোকামাকড় বৃদ্ধি পাবে আর বাদুড় তার খাবার খুঁজে পাবে।
সৌর শক্তি বিশ্বব্যাপী পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উত্স। অনুমান করা হচ্ছে এর ক্ষমতা ২০২৬ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ২০২৭ সালের মধ্যে কয়লাকে ছাড়িয়ে যাবে। তাই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে পরিবেশে এর প্রভাব যাতে ন্যূনতম হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 7 =