বড়ো তৃণভোজী পশু আগাছা, বহিরাগত উদ্ভিদ নাশ করে দেশীয় প্রজাতি বাঁচায়

বড়ো তৃণভোজী পশু আগাছা, বহিরাগত উদ্ভিদ নাশ করে দেশীয় প্রজাতি বাঁচায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বড়ো তৃণভোজী প্রাণীরা জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি খেয়ে, পদদলিত করে স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ রক্ষা করতে পারে। আপনি ভাবতেই পারেন, বড়ো প্রাণিরাও কি দেশীয় গাছপালা খাবে না এবং পদদলিত করবে না? আশ্চর্য হবেন জানলে, স্থানীয় গাছপালা সহস্রাব্দ ধরে এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে তারা নানা তৃণভোজী প্রজাতির বিধ্বংসী আচরণ সহ্য করতে পারে, কিন্তু বহিরাগত আক্রমণকারী উদ্ভিদ সাধারণত তা পারে না। আরহাস ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার একটি নতুন গবেষণা যা বৈজ্ঞানিক জার্নালে, নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে সমীক্ষায় বৃহৎ তৃণভোজী প্রাণিকে প্রাকৃতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার দারুণ সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে, যাতে দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদকে আক্রমণাত্মক উদ্ভিদের থেকে রক্ষা করা যায়। প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বের বৃহত্তম বন্যপ্রাণী জরিপ ও উদ্ভিদের জন্য ভারতের পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি থেকে গবেষকরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
গবেষণাটি মেগা-তৃণভোজী, অর্থাৎ এক টনের বেশি ওজনের প্রাণিদের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ভারতে এই প্রণি হল হাতি, গন্ডার, বন্য জল মহিষ এবং ভারতীয় বাইসন, যা বিশ্বের বৃহত্তম ভারী গবাদি পশু। অধ্যয়নটি মেগা-তৃণভোজীর সংখ্যা এবং দেশীয় এবং আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে ভারসাম্যের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যেখানে অনেক মেগা-তৃণভোজী রয়েছে, সেখানে স্থানীয় উদ্ভিদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ কম সংখ্যক রয়েছে। বিপরীতে যেসব জায়গায় মেগা-তৃণভোজীর সংখ্যা কম বা নেই, সেখানে আক্রমণাত্মক প্রজাতির উদ্ভিদের প্রাধান্য। ভারতে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে আক্রমণাত্মক উদ্ভিদের বৃদ্ধি এত লম্বা এবং ঘন হয়ে উঠেছে যে মেগা-তৃণভোজীরা সেখানে যেতে পারে না।
প্রশ্ন হল এই বিষয়ে কেন এত আলোচনা? কারণ জাতিসংঘ আক্রমণাত্মক প্রজাতিকে বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ঝুঁকির মধ্যে একটি হিসেবে জানিয়েছেন। আক্রমণাত্মক প্রজাতি হল এমন প্রাণি, গাছপালা এবং ছত্রাক যেগুলি সেই অঞ্চলের স্থানীয় নয় উপরন্তু স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে। এই জৈবিক আক্রমণে প্রচুর খরচও হয়ে থাকে গত ৫০ বছরে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্বব্যাপী ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় করা হয়েছে, কিন্তু বিশেষ সাফল্য আসেনি।
আক্রমণাত্মক উদ্ভিদের বিরুদ্ধে অভিযানে মেগা তৃণভোজী নেওয়ার কারণ হল, তাদের বড় আকারের জন্য তারা প্রচুর খায়। আর তারা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ খেতে অভ্যস্ত, এমনকি কম পুষ্টিগুণযুক্ত প্রজাতিও, কারণ তারা সহজে বাছাই করতে পারে না। অতএব, তাদের খাদ্যতালিকায় অপরিচিত উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা বেশি। গবেষণা দলটি গবেষণায় তৃণভোজীদের ছোট প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারত, কিন্তু স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে তাদের ভূমিকা বেশ জটিল; আর বাঘ, চিতাবাঘ তাদের খেযে ফেলে, কিন্তু হাতি, গণ্ডারের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা নেই।

গবেষণার প্রধান লেখক, নিনাদ অবিনাশ মুঙ্গি, আরহাস ইউনিভার্সিটির একজন পোস্টডক, জানিয়েছেন যে আক্রমণকারী প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চারণ প্রাণীর আকার নির্ধারক নয়। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে বড়ো, মাঝারি এবং ছোট তৃণভোজীর মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। হরিণ, মোষ, গবাদি পশু এবং ঘোড়া এদের ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়, এরা একসাথে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি ধ্বংস করতে পারে। অর্থাৎ মাঝারি, বড়ো আকারের তৃণভোজী পশু দিয়েও বহিরাগত আগাছা নাশ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 7 =