বিশ্ব জুড়ে ক্ষতিকারক গাছপালা প্রাণীদের মোকাবিলা

বিশ্ব জুড়ে ক্ষতিকারক গাছপালা প্রাণীদের মোকাবিলা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক প্রাণী বা উদ্ভিদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে- ফসল ধ্বংস করছে, বন ধ্বংস করছে, চারিদিকে রোগ ছড়াচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে। মানব সভ্যতা এদের কোনোভাবেই থামাতে পারছেনা। যেমন পূর্ব আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া হ্রদের জল আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলেছে কচুরিপানা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাখির প্রজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে ইঁদুর এবং বাদামী রঙের সাপ, নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ জিকা ভাইরাস, পীত জ্বর, ডেঙ্গু। প্রতিবেদনে ৩৭০০০-এরও বেশি তথাকথিত অজানা কিছু প্রজাতিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যেগুলো তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে অনেক অনেক দূরে ছড়িয়ে পরছে। ১৯৭০ সাল থেকে এই সংখ্যাটি দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে আর সঙ্গে গড়ে প্রতি দশকে চারগুণ হারে ক্ষয়ক্ষতির অর্থ বাড়ছে।
রিপোর্টে উপসংহারে বলা হয়েছে যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিকারক প্রাণী দ্বারা আক্রমণের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বাড়বে এই ক্ষতিকারক প্রজাতির প্রভাব। শুধুমাত্র ১৭% দেশে এই আক্রমণ ব্যবস্থাপনার জন্য আইন বা প্রবিধান রয়েছে। দুর্ঘটনাক্রমে হোক বা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই হোক কোনো প্রজাতিকে তার উৎসের জায়গা থেকে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দেখতে পাওয়ার মূল কারণ হল মানুষ। মানুষের কার্যকলাপের দ্রুত সম্প্রসারণ প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে। এক সময়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদের ৯০% ঢেকে থাকা কচুরিপানা পরিবহন ব্যবস্থা পঙ্গু করে দেয়, জলজ প্রাণীদের শ্বাস গ্রহণে বাধা দেয়, জলবিদ্যুৎ উৎপন্নে বাধার সৃষ্টি করে এবং মশার বংশবৃদ্ধি করে। বেলজিয়ামের ঔপনিবেশিক কর্মকর্তারা রোয়ান্ডায় একটি শোভাময় বাগানের ফুল হিসাবে এটি প্রথম নিয়ে আসেন যা ১৯৮০ সালে কাগেরা নদী দিয়ে ছড়িয়ে পরে। উনিশ শতকে ইংরেজরা যখন নিউজিল্যান্ডে কলোনি বিস্তার করে তারা সেখানে শিকার এবং খাবারের জন্য খরগোশ নিয়ে যায়। খরগোশের প্রভূত পরিমাণে সংখ্যাবৃদ্ধি হওয়াতে তখন কর্মকর্তারা তাদের বৃদ্ধি রোধ করতে স্টোট নামক হিংস্র ছোটো মাংসাশী প্রাণী আমদানি করে। কিন্তু স্টোট খরগোশ ছেড়ে সহজ শিকারের পিছনে ছুটতে লাগল আর তাই কয়েক ডজন স্থানীয় পাখির প্রজাতি যেমন কিউই, রাইবিল নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে। ঠিক একইভাবে ভূমধ্যসাগর আজ এমন অনেক মাছ ও উদ্ভিদে পূর্ণ যা লোহিত সাগর থেকে সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরে এসেছে। আইপিবিইএস রিপোর্ট অনুসারে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যের কারণে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ক্ষতিকারক প্রাণী বা উদ্ভিদের সংখ্যা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গবেষণা অনুসারে, আবাসস্থলের ক্ষতি, বিশ্ব উষ্ণায়ণ এবং দূষণ ছাড়াও ৬০% নথিভুক্ত উদ্ভিদ বা প্রাণী বিলুপ্তির কারণ এই প্রজাতির আক্রমণ। গত ডিসেম্বরে মন্ট্রিলে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে বলা হয়েছে আক্রমণাত্মক প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে করে ফেলা হবে। প্রতিরক্ষার তিনটি নিয়মের কথা বলা হয়েছে – প্রতিরোধ, নির্মূল এবং তারপরে ব্যর্থ হলে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ করে রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 13 =