প্রায় ১৪৮ থেকে ১৫০ মিলিয়ন বছর আগে, একটি অদ্ভুত ফিজেন্ট আকারের পাখির মতো ডাইনোসর দক্ষিণ-পূর্ব চীনে বসবাস করত। এদের পা লম্বাটে এবং দুটো বড়ো ডানার মতো ছিল। দৈহিক গঠন থেকে মনে হয় যে হয়তো এরা খুব জোরে দৌড়তে পারত অথবা খাবারের খোঁজে কম জলে বক বা হিরণ জাতীয় পাখিদের মতো হেঁটে বেড়াত। বিজ্ঞানীরা ফুজিয়ান প্রদেশে একটি জুরাসিক যুগের ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন, নাম দিয়েছেন ফুজিয়ানভেনেটর প্রডিজিওসাস। বিজ্ঞানীদের মতে প্রাণীটি পাখিদের বিবর্তনের ধাপের উপর আলোকপাত করে। চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ ভার্টিব্রেট প্যালিয়েন্টোলজি এবং প্যালিওনথ্রোপলজির জীবাশ্মবিদ মিন ওয়াং-এর মতে ফুজিয়ানভেনেটরের দৈহিক গঠনের জন্য এদের আদৌ পাখি হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা তা নির্ভর করে পাখিকে কীভাবে আমরা সংজ্ঞায়িত করেছি তার উপর। ডাইনোসরের বিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল যখন থেরোপড নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর ছোটো পালকযুক্ত দুই পায়ের ডাইনোসররা জুরাসিক যুগের শেষের দিকে পাখির জন্ম দেয়। আর্কিওপ্টেরিক্স নামে এই প্রাচীনতম পরিচিত পাখি জার্মানিতে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর আগে দেখা যেত। ওয়াং-এর মতে ফুজিয়ানভেনেটর- এভিয়ালান নামক একটি গোষ্ঠীর অন্তর্গত যার মধ্যে সমস্ত পাখি এবং তাদের নিকটতম নন-এভিয়ান ডাইনোসর অন্তর্ভুক্ত। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে উল্কাবৃষ্টিতে পাখিরা বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু ডাইনোসর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফুজিয়ানভেনেটরে ফসিলের মাথার খুলি এবং পায়ের কিছু অংশ পাওয়া যায়নি যার ফলে এদের খাদ্য ও জীবনধারা ব্যাখ্যা করা একটু কঠিন। ফুজিয়ানভেনেটরের নীচের পায়ের হাড় অর্থাৎ টিবিয়া তার উরুর হাড় ফিমারের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা। এই ধরনের বৈশিষ্ট্য থেরোপডদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। থেরোপডের মধ্যে সমস্ত মাংসাশী ডাইনোসর যেমন টাইরানোসরাস অন্তর্ভুক্ত। এদের লেজও হাড় দিয়ে তৈরি ছিল। হাতের বদলে এদের পাখির ডানার মতো ছিল কিন্তু ডানায় তিনটি নখর ছিল যা আধুনিক পাখিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ফুজিয়ানভেনেটর উড়তে পারে কি না তা নির্ধারণ করা যায়নি তবে এদের দৈহিক গঠন দেখে মনে হয়েছে যে তারা সম্ভবত উড়তে পারত না। ফুজিয়ানভেনেটরের জীবাশ্মে যদিও কোনো পালক পাওয়া যায়নি তবে সমস্ত এভিয়ালান থেরোপডের পালক ছিল তাই এদেরও পালক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জীবাশ্মের স্বল্পতার কারণে পাখির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়গুলো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। আর্কিওপ্টেরিক্সের পরে পরবর্তী যে পাখিদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তার মাঝে দীর্ঘ ২০ মিলিয়ন বছরের ব্যবধান রয়েছে।