বধিরতা রোধে কানের অন্তঃস্থ অঞ্চলে গবেষণায় সাফল্য

বধিরতা রোধে কানের অন্তঃস্থ অঞ্চলে গবেষণায় সাফল্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এক দল আন্তর্জাতিক গবেষক আভ্যন্তরীণ কানে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন। মস্তিষ্কে তরল পদার্থের স্বাভাবিক সঞ্চালনকে কাজে লাগিয়ে এবং ককলিয়ার পিছনে সম্বন্ধে সামান্য যা ধারণা আছে তা কাজে লাগিয়ে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জিন থেরাপির সাহায্যে আভ্যন্তরীণ কানের রোমের কোশ মেরামত করে সফলভাবে বধির ইঁদুরের শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধার করেছেন। সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল পরিবহন প্রাপ্তবয়স্কদের আভ্যন্তরীণ কানে জিন সরবরাহের পথ হতে পারে এবং মানুষের শ্রবণশক্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য জিন থেরাপি ব্যবহার করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মৃদু থেকে সম্পূর্ণ শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বিশ্বব্যাপী এমন লোকের সংখ্যা শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ প্রায় ২.৫ বিলিয়ন হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। বধিরতার প্রাথমিক কারণ হল ককলিয়াতে পাওয়া রোমের কোশের মৃত্যু বা কার্যকারিতা হ্রাস, এই রোম মস্তিষ্কে শব্দগুলি পরপর রিলে করে পাঠায়। এর জন্য জিনের জটিল মিউটেশন, বার্ধক্য, প্রবল শব্দে উন্মুক্ত হওয়া ও অন্যান্য কিছু কারণ থাকে৷ যদিও রোমের কোশ মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে আবার গজায় না, তবে পৃথক গবেষণায় জিন থেরাপি করে খুব অল্প বয়স্ক ইঁদুরের এই কোশের কার্যকারিতা মেরামত করা গেছে। ইঁদুর এবং মানুষ উভয়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ককলিয়া, টেম্পোরাল হাড়ের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে জিন থেরাপি দেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টা এই সংবেদনশীল অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
ককলিয়ার অ্যাক্যুয়েডাক্ট হল একটি পাতলা হাড়ের চ্যানেল, যা চুলের একক স্ট্র্যান্ডের মতো সূক্ষ, এটা কানে চাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ককলিয়ার অ্যাক্যুডাক্ট আভ্যন্তরীণ কানের মধ্যে পাওয়া সেরিব্রোস্পাইনাল তরল এবং মস্তিষ্কের বাকি অংশের মধ্যে একটি নালী হিসাবেও কাজ করে। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের বর্জ্য অপসারণের অনন্য প্রক্রিয়া গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের মেকানিক্সের একটি পরিষ্কার ছবি তৈরি করছেন। গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বিষাক্ত প্রোটিনগুলি ধুয়ে ফেলার জন্য মস্তিষ্কের টিস্যুতে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল পাম্প করে, গবেষকরা এটাকে মস্তিষ্কে ওষুধ সরবরাহের একটি সম্ভাব্য নতুন উপায় হিসাবে বিবেচনা করছেন।
গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম দ্বারা চালিত তরলের আন্দোলন কান সহ চোখ এবং পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়। নতুন গবেষণায় গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে ড্রাগ পৌঁছোনোর সম্ভাব্য উপায় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে পূর্বে পৌঁছানো যায়নি শ্রবণ ব্যবস্থার এমন অংশকে লক্ষ করা হয়েছে।
তরল কীভাবে ককলিয়ার অ্যাক্যুয়েডাক্টের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয় তা দেখে, গবেষক দল মাথার খুলির গোড়ায়, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের বৃহৎ আধার সিস্টারনা ম্যাগনায় একটি অ্যাডেনো অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস ইনজেকশন দেয়। ভাইরাসটি ককলিয়ার অ্যাক্যুডাক্টের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কানে প্রবেশ করেছে এবং একটি জিন থেরাপি দিয়েছে যা ভেসিকুলার গ্লুটামেট ট্রান্সপোর্টার -3 নামক প্রোটিনকে প্রকাশ করে, যা রোমের কোশগুলোকে সংকেত প্রেরণ করতে সক্ষম করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক বধির ইঁদুরের শ্রবণশক্তি উদ্ধার পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + twelve =