ঠান্ডা তাপমাত্রায় কীভাবে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় – এই গবেষণা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিকিৎসায় কাজে লাগানো যায়

ঠান্ডা তাপমাত্রায় কীভাবে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় – এই গবেষণা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিকিৎসায় কাজে লাগানো যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঠান্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে নিজেদের শক্তি পোড়ায়। শক্তি ব্যবহারের এই বৃদ্ধি প্রাণীদের ক্ষুধা এবং খাওয়া বাড়ায়, কিন্তু কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রিত হয় তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অজানা। স্ক্রিপস রিসার্চের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা কম তাপমাত্রার সময় এই ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মস্তিষ্কের সার্কিটগুলি চিহ্নিত করেছেন। নেচার জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায়, গবেষকরা ইঁদুরের মধ্যে নিউরনের একটি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছেন যা এই ঠান্ডা-সম্পর্কিত, খাদ্য-সন্ধানী আচরণের জন্য “সুইচ” হিসাবে কাজ করে। এই আবিষ্কার বিপাকীয় স্বাস্থ্য এবং ওজন হ্রাসের জন্য সম্ভাব্য চিকিৎসা হতে পারে। এটা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটা মৌলিক অভিযোজিত প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে চিকিত্সার সাহায্যে ঠাণ্ডা বা অন্যান্য ধরণের চর্বি পোড়ানোর বিপাকীয় সুবিধাগুলো নেওয়া যেতে পারে। গবেষক দল মস্তিষ্কের সার্কিট সনাক্ত করতে পেরেছেন যা এই ঠান্ডা-প্ররোচিত ক্ষুধা বৃদ্ধির মধ্যস্থতা করে।
হোল ব্রেন ক্লিয়ারিং এবং লাইট শীট মাইক্রোস্কোপি কৌশলের সাহায্যে,গবেষকরা ঠান্ডা বনাম উষ্ণ পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক জুড়ে নিউরনের কার্যকলাপ তুলনা করেছেন। তারা মূলত যা পর্যবেক্ষণ করেছেন তা হল ঠাণ্ডা অবস্থায় মস্তিষ্ক জুড়ে বেশিরভাগ নিউরোনের কার্যকলাপ অনেক কম ছিল কিন্তু থ্যালামাস নামক অঞ্চলের অংশগুলোর সক্রিয়তা বেশি ছিল। গবেষকরা মিডলাইন থ্যালামাসের জিফয়েড নিউক্লিয়াস নামে নিউরনের একটি নির্দিষ্ট ক্লাস্টারে দেখেছেন, এই নিউরনের কার্যকলাপ ঠান্ডা পরিস্থিতিতে ঠিক তখন বৃদ্ধি পায় যখন ইঁদুরেরা তাদের খাবারের সন্ধানের জন্য ঠান্ডা-প্ররোচিত জড়তা কাটিয়ে উঠে নড়া চড়া শুরু করে। ঠাণ্ডা অবস্থার শুরুতে যখন কম খাবার পাওয়া যেত, তখন জিফয়েড নিউক্লিয়াসের ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি আরও বেশি ছিল এর থেকে বোঝা যায় যে এই নিউরনগুলো ঠান্ডায় নয় ঠান্ডা-প্ররোচিত শক্তির ঘাটতিতে সাড়া দেয়।
গবেষকরা যখন কৃত্রিমভাবে এই নিউরনগুলো সক্রিয় করেছিলেন, তখন ইঁদুররা তাদের খাদ্য-সন্ধান বৃদ্ধি করেছিল, কিন্তু তাদের অন্যান্য কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়নি। গবেষকরা যখন এই নিউরনগুলির কার্যকলাপে বাধা দেয়, তখন ইঁদুরগুলি তাদের খাদ্য-সন্ধানী প্রবৃত্তি হ্রাস করে। এই প্রভাবগুলো শুধুমাত্র ঠাণ্ডা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল, যা থেকে বোঝা যায় যে ঠান্ডা তাপমাত্রা ক্ষুধা পরিবর্তনের জন্য একটি পৃথক সংকেত পাঠায়।
শেষ পরীক্ষায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে এই জিফয়েড নিউক্লিয়াস নিউরনগুলো মস্তিষ্কের একটা অঞ্চলে দেখা যায় যাকে নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেন্স বলা হয়। এই এলাকা যা দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার আচরণ সহ পুরস্কার এবং অপছন্দের সংকেতকে একীভূত করে আচরণকে নির্দেশিত করার জন্য পরিচিত। এই ফলাফলগুলোর ক্লিনিকাল প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে, স্বাভাবিক ঠান্ডা-প্ররোচিত ক্ষুধা বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তুলনামূলকভাবে সহজ ঠান্ডা সংস্পর্শের পদ্ধতিগুলো ওজন কমানোয় বেশি সাহায্য করে। শক্তি-ব্যয় বৃদ্ধি থেকে ক্ষুধা বৃদ্ধিকে কীভাবে আলাদা করা যায় তা গবেষকরা বের করতে চাইছেন। তারা আরও খুঁজে বের করতে চান যে এই ঠান্ডা-প্ররোচিত ক্ষুধা-বৃদ্ধির প্রক্রিয়া একটা বিস্তৃত প্রক্রিয়ার অংশ কিনা যা শরীর অতিরিক্ত শক্তি ব্যয়ের পর যেমন ব্যায়ামের পরে ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যবহার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − eleven =