অস্ট্রেলিয়ায় দৈত্যাকার ট্র্যাপডোর মাকড়সার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে

অস্ট্রেলিয়ায় দৈত্যাকার ট্র্যাপডোর মাকড়সার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

লক্ষ লক্ষ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া ছিল মাকড়সার স্বর্গরাজ্য। বর্তমানে এই মহাদেশের শুষ্ক কেন্দ্রস্থলে বিজ্ঞানীরা একটি বড়ো আকারের মাকড়সার নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন। এই মাকড়সাটি একদা সেখানকার সবুজ রেনফরেস্টে বিচরণ করত এবং শিকার করত। এটি অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া চতুর্থ মাকড়সার জীবাশ্ম, এবং পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাওয়া বৃহৎ ব্রাশ-ফুটেড ট্র্যাপডোর মাকড়সা পরিবার, Barychelidae-এর অন্তর্গত একটি মাকড়সা। প্রায় ১১ থেকে ১৬ মিলিয়ন বছর আগে মিওসিন সময়কালে বসবাসকারী এই প্রজাতিটির আনুষ্ঠানিকভাবে মেগামোনোডোনটিয়াম ম্যাকক্লুস্কি নামকরণ করা হয়েছে। সমগ্র মহাদেশ জুড়ে মাত্র চারটি মাকড়সার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, আর তাই বিজ্ঞানীরা এদের বিবর্তনের ইতিহাস আজও বুঝে উঠতে পারেনি। নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের প্যালিওন্টোলজিস্ট ম্যাথিউ ম্যাককারি বলেছেন আবিষ্কারটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি মাকড়সার বিলুপ্তি সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করে ।
এই জীবাশ্মের সবচেয়ে নিকটতম জীবিত আত্মীয় বর্তমানে সিঙ্গাপুর থেকে পাপুয়া নিউ গিনির ওয়েট ফরেস্টে বাস করে। মাকড়সার এই প্রজাতিটি অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডের সবুজ পরিবেশে বাস করত কিন্তু পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়া আরও শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ম্যাকগ্রাথস ফ্ল্যাট নামে পরিচিত নিউ সাউথ ওয়েলসের তৃণভূমি অঞ্চলে মায়োসিন সময়কালের পাওয়া জীবাশ্মের মধ্যে মাকড়সাটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ম্যাকগ্রাথস ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া কিছু জীবাশ্মে, উপকোশীয় কাঠামোও দেখতে পাওয়া যায়। জীবাশ্ম ধারণকারী স্তরে এক ধরনের লৌহ-সমৃদ্ধ শিলা পাওয়া যায় যাকে বলা হয় গোয়েথাইট। সংরক্ষণটি এতটাই বিশদ ছিল যে গবেষকরা মাকড়সার দেহে ছোটো ছোটো বিবরণ তুলে ধরতে পেরেছেন এবং এটিকে মনোডোনটিয়ামের আধুনিক জেনাস বা গণের কাছাকাছি একটি গণে অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা আকারে পাঁচগুণ বড়ো। মেগামোনোডোনটিয়াম ম্যাকক্লুস্কি-এর শরীরের পরিমাপ ২৩.৩১ মিলিমিটার বা মাত্র এক ইঞ্চিরও নীচে, কিন্তু এর পা ছড়িয়ে রাখলে হাতের তালুর আকারে হবে। ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট মাইকেল ফ্রেস ব্যাখ্যা করেন স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপির সাহায্যে মাকড়সার পেডিপালপ, পা এবং প্রধান শরীর ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ অধ্যয়ন করা গেছে। এদের শরীরে থেকে ‘সিটাই’ হল রোমের মতো গঠন যা বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে যেমন রাসায়নিক এবং কম্পন অনুভব করতে পারে, আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে মাকড়সাকে রক্ষা করতে পারে এমনকি শব্দও করতে পারে। কুইন্সল্যান্ড মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ববিদ রবার্ট রেভেনের মতে এটি শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া মাকড়সার সবচেয়ে বড়ো জীবাশ্মই নয়, এটি সারা পৃথিবীতে পাওয়া Barychelidae পরিবারের প্রথম জীবাশ্ম। বর্তমানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ব্রাশ-ফুটেড ট্র্যাপডোর মাকড়সা জীবিত আছে, কিন্তু তারা সহজে জীবাশ্মে পরিণত হয় না। হয়তো তারা বেশিরভাগ সময় গর্তের ভিতরে থাকে এবং তাই জীবাশ্মে পরিণত হওয়ার জন্য সঠিক পরিবেশ পায় না।